Header Ads

বিহার ও ঝাড়খণ্ডকে টেক্কা দিয়ে বাংলাকে পথ দেখালো মালদার লিচু


ফলের রাণী লিচু। যার স্বাদ ও গন্ধ অতুলনীয়। প্রতিটি বাঙালির অত্যন্ত প্রিয় একটি ফল হলো লিচু ৷ বাংলার লিচু মানেই মালদার লিচু। প্রতি বছর আম চাষের মতো মালদার লিচু চাষও বাংলাকে পথ দেখাচ্ছে। মালদার আবহাওয়া, মাটি ও ভূপ্রকৃতির অপরূপ বৈচিত্র্য লিচু চাষের জন্য একদম উপযুক্ত। গঙ্গার পললমৃত্তিকা সমৃদ্ধ এই অঞ্চলটি উর্বর ও কৃষিসমৃদ্ধ৷ ভূ-প্রকৃতি সমতল ও কিছু স্থানের ভূমি উঁচু-নিচু৷ গঙ্গা, মহানন্দা, টাঙ্গন ও পুনর্ভবার মতো নদী মালদার মধ্যে প্রবাহিত হওয়ার ফলে কৃষিকার্যে বিশেষ সুবিধা হয় ৷  


চলতি বছরে মালদার কালিয়াচকের চামা, কলেজ মোড় ও সুলতান গঞ্জে ব্যাপক ফলন লক্ষ্য করা গেছে লিচুর। কালিয়াচক গ্রাম  ১, কালিয়াচক ২ গ্রাম পঞ্চায়েত সহ আলিপুর ১, আলিপুর ২ এবং শেরশাহী পঞ্চায়েতের উৎপাদন এ বছর তুলনামূলক ভাবে বেশি ৷ 

গত কয়েক বছরে ভিন রাজ্য যেমন বিহার ও ঝাড়খণ্ডের লিচু ব্যবসায়ীরা বাংলার বাজার দখল করে নিয়েছিল৷ তবে আধুনিক পদ্ধতিতে লিচু উৎপাদন করে এবার বিহার ও ঝাড়খণ্ডকে টেক্কা দিলো বাংলার লিচু৷ মালদার কালিয়াচকের হাট রোড, চৌরঙ্গী ও চৌত্রিশ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে লিচুর বিশাল আড়ত বসে। এই আড়তে ২০২০ সালে ভিড় করতে দেখা যাচ্ছে ভিন রাজ্যের ব্যবসায়ীদের। কিন্তু বাংলার ব্যবসায়ীদের কাছে তারা কোনোমতেই প্রতিযোগিতায় পেরে উঠতে পারছে না। আমফানের প্রভাবে লিচুর ফলন সামান্য হ্রাস পেলেও ভিন রাজ্যের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিজেদের বাজার দখলের মাধ্যমে নতুন স্বপ্ন দেখালো মালদার লিচু। ফলন কম হওয়ার জন্য দাম হয়তো একটু বেশি। কালিয়াচকের আড়তে ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা দরে ১০০০ লিচু বিক্রি হচ্ছে। যদিও অন্য রাজ্যের তুলনায় দাম অনেকটাই কম। 

মালদায় সাধারণত দু-ধরণের লিচু উৎপাদিত হয়, গূটি লিচু ও বোম্বাই লিচু৷ স্বাদে বোম্বাই লিচু গূটি লিচুর থেকে এগিয়ে। গূটি লিচুর আঁটি বড় থাকে যা  পেকে গেলে দেশীয় লিচুর মতো দেখতে লাগে। আর বোম্বাই লিচুর আঁটি ছোটো কিন্তু পেকে গেলে তার গায়ের রঙ টুকটুকে লাল হয়ে যায়। এই বোম্বাই লিচুর চাহিদা অনেকটাই বেশি। গ্রীষ্মের এই মরসুমে করোনার আবহে গূটি লিচুর বিক্রি প্রায় শেষের পথে। গূটি লিচু শেষ হতে না হতেই বোম্বাই লিচুর রপ্তানি শুরু হয়েছে। মালদার অলিতে-গলিতে ব্যাপক হারে বিক্রি হচ্ছে লিচু। আমফানের পরও লিচুর এমন সাফল্যে খুশী মালদার লিচু চাষী ও ব্যবসায়ীরা। ২০১৮ সালেই মালদার হর্টিকালচার বিভাগে কথা উঠেছিল মালদার লিচু পাড়ি দেবে ভিন রাজ্যে। সেই কথামতো লিচু নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, জীবাণুনাশকের মাধ্যমে লিচু চাষ শুরু করা হয়৷ লিচুতে প্রধানত ছত্রাক জাতীয় রোগ দেখা যায়। যার ফলে গোড়া পচে যাওয়ার ভয় থাকে। এই সমস্যাগুলো দূরীকরণ করে লিচু চাষে লাভের মুখ দেখছে মালদা জেলা। প্রতি বছর মালদাতে বারো থেকে তেরো হাজার মেট্রিক টন লিচু উৎপাদিত হয়। লকডাউনের ফলে গাছের পরিচর্যার অভাবে ও পর্যাপ্ত শ্রমিকের অভাবে ফলন হ্রাস পেলেও বিহার ও ঝাড়খণ্ডে প্রবল চাহিদা বাড়ছে বাংলার লিচুর৷ যা নিঃসন্দেহে সমৃদ্ধ করবে বাংলার কৃষিকাজকে ৷ 

প্রতিবেদন- লিটারেসি প্যারাডাইস ইনফরমেশন ডেস্ক

No comments