লকডাউনে চিত্রনাট্যকারদের অবসাদগ্রস্থতা নিয়ে একটি অনবদ্য ছবি 'অনেকটা সিনেমা'
লকডাউনের নতুন প্লট
আঁকা হয়েছে পৃথিবীতে। এমন প্লট পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম বার। মানুষের সমস্ত কাজ বন্ধ
করে বসে থাকতে হবে বদ্ধ খাঁচায়। কিন্তু শিল্প-সাহিত্যের লোক কি আর বসে থাকতে পারে? তাদের আনচান করা মন নিয়ে সিনেমা থেকে গান বা কবিতা এসবের
কাজ থেমে যায়নি। বাড়িতে থেকে সিনেমা বানানো, কেউ কাকেও দেখতে পাচ্ছেন না। দেওয়ালের আড়ালে লুকিয়ে নতুনত্ব রেখে কাজ করা এরকম নতুন অভিজ্ঞতাকে সামনে রেখে শিল্পসমাজ
কাজ করেই চলেছে।
এরকম-ই একটি
ভিন্নধর্মী গল্পের উদাহরণ হল 'অনেকটা সিনেমা'। এ. আই ক্রিয়েশনের প্রযোজনায় অর্ণব কর এবং ইন্দ্রানী
আদকের পরিচালনায় তৈরি হয়েছে এই সিনেমা।
এই সিনেমাতে উঠে এসেছে
একজন পেশাগত চিত্রনাট্যকারের লকডাউন কালীন অস্থিরতা নিয়ে। গল্পের প্রধান
চরিত্র অর্থাৎ চিত্রনাট্যকারের নাম নিখিল লকডাউনের শুরুতে ভেবেছিলেন যে এই লকডাউনের
সময়টা তিনি ভালো ভাবেই কাটাবেন তার পড়ে থাকা কাজগুলি এগিয়ে রাখবেন। কিন্তু বাস্তবে
তা হয়নি একের পর এক প্রযোজক ওনাকে ফোন করে স্ক্রিপ্টের কাজ দিতে শুরু করে দিলেন
অত্যন্ত কম সময়ের মধ্যে। কোনো প্রযোজক বলছেন ১০ টা পর্বের চিত্রনাট্য চাই তো
কোনো প্রযোজক বলছেন দুদিনের মধ্যেই চিত্রনাট্য চাই। কোনো প্রযোজকই তাকে বেশি সময়
দিতে অপারগ। যার ফলে চিত্রনাট্যকারের একটি অবসাদগ্রস্থতা তৈরি হয়। তিনি প্লট
কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছেন না। ওনার বান্ধবীও ওনার প্রতি বিরক্ত হচ্ছেন। এইভাবে
অবসাদগ্রস্থতা বাড়ার ফলে তিনি আত্মহত্যা তৈরির চেষ্টা করতে গিয়েও পারছেন না। এভাবেই গল্পে তৈরি হয়েছে অত্যন্ত সুন্দর একটা জালবুনন। শেষটা দর্শকদের দেখার সময়
যাতে আগ্রহের ব্যাঘাত না ঘটে তাই গল্পটা বলছি না।মোটামুটি গল্পের একটা ধারণা দিয়ে
রাখলাম।
এই ছবিতে নিখিলের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন হিমন ঘোষ যার অভিনয় ছিল অত্যন্ত সুন্দর ও সাবলীল। একটি গল্পের সব চরিত্রের অভিনয়-ই সমান গুরুত্বপূর্ণ তবে কিছু কিছু চরিত্র থাকে যেগুলোর ওপর সিনেমার পূর্ণতা নির্ভর করে। এই গল্পে যেহেতু ৯০ শতাংশ সময়ই নিখিলের অভিনয় তাই এই চরিত্রটি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ।হিমন ঘোষ যথেষ্ট সাবলীল ভাবে এই অভিনয়টি করেছেন। বডি ল্যাঙ্গুয়েজ, কথা, মুখের ভঙ্গিমা, হাসির অভিনয়, অবসাদগ্রস্থ থাকার অভিনয় সবই ছিল যথেষ্ট সুন্দর ও ত্রুটিমুক্ত। পিউ এর চরিত্রে অভিনয় করেছেন সোহিনী ঘোষ। পিউ চরিত্রটির দৈর্ঘ্য ছিল খুব স্বল্প কিন্তু সেইটুকু অভিনয়ও যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসের সাথেই করেছেন সোহিনী ঘোষ। প্রযোজকের চরিত্রে অভিনয় করেছেন পৃথ্বিশ হালদার। তার অভিনয়ও ছিল দুর্দান্ত। আর.বি.এস কোম্পানির প্রোডাকশন ম্যানেজার অর্থাৎ অনিমেষের চরিত্রে অভিনয় করেছেন ইন্দ্রজিৎ হালদার। অনিমেষ চরিত্রের অভিনয় ছিল মনোমুগ্ধকর। শালবনী দাস এবং উদীপ্ত ব্যানার্জী ভয়েস ওভারের কাজ করেছেন। এক্ষেত্রেও এই দুজনের গলা ছিল যথেষ্ট মানানসই। সবার অভিনয়ের এতটুকুও ত্রুটি খুঁজে আপনি পাবেন না একথা চোখ বন্ধ করে বলাই যায়।
এই ছবিতে সিনেমাটোগ্রাফারের কাজ করেছেন অর্ণব কর, কৌস্তভ সরকার, সন্দীপ চৌধুরী এবং বৈভব হালদার। ড্রোন ক্যামেরার কাজ করেছেন ত্রিদিব মজুমদার। সাবটাইটেলের কাজ করেছেন আকাশ মুখার্জী।
ছবির পরিচালনা এবং
চিত্রনাট্যের কাজ করেছেন অর্ণব কর এবং ইন্দ্রানী আদক।ছবির পরিচালনার ক্ষেত্রে
পরিকল্পনা ও ভাবনা দুটিই ছিল বেশ মার্জিত। যার ফলে এই ফিল্মটি আরো সুন্দর হয়েছে।
যেমন প্রথম দিকে সুন্দর ভাবে বুদ্ধি করে হাতে আঁকা ছবিগুলো ব্যবহার করেছেন ওনারা, যে কারণে সিনেমার প্রতিটি শট সুন্দর ভাবে ফুটে উঠেছে। এছাড়াও বিভিন্ন ভাস্কর্যের
ব্যবহার ইত্যাদি বিভিন্ন ভাবে সাজানোর চেষ্টা হয়েছে ফ্রেমগুলো।
ছবিতে চোখ ধাঁধানো ইডিটিং এর কাজ করেছেন
অর্ণব কর। এতে ক্রিয়েটিভ ডিজাইনিং এর কাজ করেছেন সৌম্যদ্বীপ
মাজি এবং ইন্দ্রানী আদক। চিত্রাঙ্কনের কাজ করেছেন হিমন ঘোষ।
সিনেমাটির মাহাত্ম্য আরো বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে অপূর্ব ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের ব্যবহার এবং সিনেমার ক্লাইম্যাক্সে
থাকা 'জীবন নদীর কুলে কুলে' গানটি। সাত্যকী ব্যানার্জীর এই গানটি এই ফিল্মে ব্যবহৃত
হয়েছে। সুন্দর অভিনয়, আবহসঙ্গীত, চিত্রনাট্য, সম্পাদনা, অলঙ্করণ সাজসজ্জা সব মিলিয়ে আপনার
সুন্দর ভাবে কাটবে এই ফিল্মের কুড়ি মিনিট তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।
প্রতিবেদন- অমিত দে
Post a Comment