হাওড়ার আমতায় আবারও একটি বাঘরোলের মৃতদেহকে ঘিরে শুরু হল চাঞ্চল্য
দিনে দিনে মানুষের বর্বরতা যেন দিন দিন
বেড়েই চলেছে। একের পর এক পৃথিবীর প্রজাতি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে মানুষের কার্যকলাপে।
এককালে সারা ভারতেই শকুন দেখা যেত আজ তা লুপ্তপ্রায়। বাঘ, সিংহ, গন্ডারের মতো বহু
প্রাণী আজ লুপ্তপ্রায়। কিছুদিন আগে কেনিয়াতে চোরাশিকারীর আক্রমণে পৃথিবীতে বেঁচে
থাকা একমাত্র স্ত্রীলিঙ্গের উট হত্যা করে বংশবিস্তারের শেষ আশায় জল ঢেলে
দেয়। আফ্রিকা মহাদেশে হাতির সংখ্যা ২ কোটি থেকে নেমে কয়েক লাখে দাঁড়িয়েছে। পৃথিবীর
জীব বৈচিত্র রক্ষায় প্রতিটি প্রাণী উদ্ভিদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তা সত্বেও
মানুষ একের পর এক বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীর সংরক্ষণে সচেতন হতে পারেনি। সারা বিশ্বেই
পরিবেশ কর্মীরা আপ্রাণ চেষ্টা করেও মানুষকে সচেতন করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। ঝুম চাষ, রাজনৈতিক
অভিসন্ধিতে জঙ্গল ধ্বংস ইত্যাদি বহু রকমের অসৎ কার্যকলাপ তো আছেই।
এরকমই একটি বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী হল
বাঘরোল। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খন্ড, বরাক উপত্যকা, ছত্রিশগড়ের প্রায় সর্বত্র এবং
ওড়িষ্যা, অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলে পাওয়া যায়। এছাড়াও বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা,
মায়ানমার, থাইল্যান্ড, পাকিস্তান, কাম্বোডিয়া ও জাভাতে এদের দেখতে পাওয়া যায়। বাঘরোলকে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপশু বা স্টেট অ্যানিমেল হিসেবেও ঘোষিত হয়েছে। এরা
সাধারণত নদীর তীর, জলাভূমি এবং ম্যানগ্রোভ অঞ্চলে বসবাস করে। ২০১৬ তে বাঘরোল আইইউসিএন
এর লাল তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয় বাঘরোল। এটি মূলত দক্ষিণ এশিয়ার প্রাণী। এশিয়ার মধ্যে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়। পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে বর্তমানে আমতা ১ নং ও ২ নং ব্লকে বাঘরোল সর্বাধিক পরিমাণে পাওয়া যায়।
এরা ফেলিডি পরিবারভুক্ত প্রাণী। নিউক্লিয়ীর
ডিএনএর ফাইলোজেনেটিক অ্যানালিসিসের মাধ্যমে জানা যায় যে এদের উৎপত্তি হয় মায়োসিন
মহাযুগে প্রায় ৮.৩৮ মিলিয়ন বছর আগে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এত বছরের পুরানো প্রাণী
আজ লুপ্তপ্রায়। এদের প্রজাতি মানুষের চেয়ে অনেক বেশি প্রাচীন মানুষের প্রায় ২ লক্ষ
বছরও আবির্ভাব হয়নি। ভারতের মতো অন্যান্য দেশগুলিতেও এই প্রাণীটির অস্তিত্ব
বিপন্ন। প্রতিটি দেশই এখন সংরক্ষণ করার চেষ্টা করছে তারপরও মানুষ দ্বারা এই
প্রাণীটিকে হত্যা করার ঘটনা দিন দিন হচ্ছে। কয়েক বছর আগে হাওড়া জেলায় একটি বাঘরোল
হত্যা নিয়ে আলোড়ন পড়ে যায় বাংলা জুড়ে। বাংলাদেশে ২০১০ থেকে ২০১৩ এর মধ্যে ৩০ টি
বাঘরোল হত্যা করেছে গ্রামবাসীরা।
গতকাল হাওড়ার আমতা ১ নং ব্লকের উদং গ্রামের আকনা পাড়া থেকে একটি বাঘরোলের মৃতদেহ উদ্ধার হয়। এক বিশাল জলার মধ্যের ঢিবি থেকে উদ্ধার হয় বাঘরোলটির মৃতদেহ। দেহটি দেখে অস্বাভাবিক মৃত্যু মনে হয়। এই খবর পেয়ে হাওড়া জেলা যৌথ পরিবেশ মঞ্চ হাওড়ার এডিএফও এবং হাওড়া রেঞ্জারের সাথে কথা বলেন। মেলের মাধ্যমে দাবি করা হয় যে বাঘরোলটি দেখে স্ত্রী বাঘরোল মনে হচ্ছে। এমনকি বাঘরোলটি সন্তান সম্ভবা হতে পারেও অনুমান করা হচ্ছে। এর আগেও একই গ্রামে গ্রামবাসীদের দ্বারা পিটিয়ে বাঘরোল হত্যার ঘটনা ঘটানো হয়েছে তাই হাওড়া জেলা যৌথ পরিবেশ মঞ্চের সম্পাদক শুভ্রদীপ ঘোষ পোস্টমর্টেম ও পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবী করেছেন।পরিবেশ কর্মী প্রদীপ রঞ্জন রীত বলেন যে কী ঘটনা ঘটেছে তা গ্রামের মানুষ দের জানা দরকার বিষ প্রয়োগ বা এই ধরণের কিছু হয়ে থাকলে আমাদের আরও বেশি করে প্রচার করতে হবে। হাওড়া জেলা যৌথ পরিবেশ মঞ্চের সাথী সংগঠন মঙ্গলদীপ শিশু কল্যান ও খরদো নিউ এজ সোসাইটি গ্রাম বাসীদের পুরো ঘটনাটি বুঝিয়ে বাঘরোলের ব্যাপারে মানুষকে সতর্ক করার চেষ্টা করছেন।
যদি আবারও
গ্রামবাসীদের দ্বারা এই ঘটনা ঘটে থাকে তবে অবশ্যই অপরাধীদের শাস্তি হওয়া উচিত।
পরিবেশ কর্মী ও সরকারকে এ নিয়ে আরো জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। সাধারণ মানুষকেও এগিয়ে
আসতে হবে। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় বাঘরোল বাঁচিয়ে রাখাটা আমাদের সকলের কর্তব্য।
প্রতিবেদন- অমিত দে
Post a Comment