Header Ads

এক যশস্বী নাট্যতারকা তুলসী লাহিড়ীর নাট্যদর্শন


পঞ্চাশের মন্বন্তরের প্রেক্ষাপটে সাধারণ কৃষকের জীবন সমস্যার সঙ্গে মুসলিম সমাজের তালাকের সমস্যা তিনি উত্থাপন করেন ছেঁড়া তার নাটকের মাধ্যমে। রহিম ও ফুলজান নামের এক দম্পতির দারিদ্র্য অসহায় অবস্থার চিত্র অঙ্কন করা হয়েছে এই নাটকে। আমরা দেখতে পাই এ নাটকে বাংলার উত্তরের এক গ্রামে মহাজন ও ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে গ্রামের মানুষের জীবনে নিদারুণ বিপর্যয় নেমে এসেছে। হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে সমস্ত গরীব মানুষই এই বিপর্যয়ের শিকার৷ কামরূপী উপভাষার মিশ্রণে এ নাটকের সংলাপ লেখা হয়েছিল। বাংলা সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় নাটক হলো ছেঁড়া তার। 


এককালে পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের দশম শ্রেণির বাংলা পাঠ্যবইয়ে  অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল এই নাটক৷ ছেঁড়া তার নাটক যার হাতে লেখা হয়েছিল তিনি হলেন প্রখ্যাত নাট্যকার তুলসী লাহিড়ী। আজ ২২ শে জুন তাঁর প্রয়াণ দিবস। এই প্রতিবেদনে আমরা তাঁর লেখা নাটক সম্বন্ধে আলোচনা করবো। 

তুলসী লাহিড়ী বাংলা নাট্য ও অভিনয় জগতের এক চিরস্মরণীয় নাম৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, দূর্ভিক্ষ ও মন্বন্তরের রূঢ় অভিঘাত ও সর্বোপরি মূল্যবোধে তাঁর দৃঢ়বিশ্বাস শিল্পমানসকে প্রভাবিত করেছিল। সঙ্গীতের মাধ্যমে তাঁর নাট্যজগতে প্রবেশ। যেখানেই তিনি বিশেষ কোনো আদর্শের কথা বলেছেন সেখানেই রবীন্দ্রনাথের গান-কবিতার উদ্ধৃতি যেন তাঁর নাটকের আবশ্যিক অঙ্গ হয়ে গেছে। নাট্যকার রূপে তিনি প্রগতিশীল নাট্যধারার সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন। তিনি নাট্য আন্দোলনের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করেছিলেন।

তিনি ছেঁড়া তার নাটক ছাড়াও ধর্মীয় ও সামাজিক নিপীড়নের আলেখ্য অবলম্বনে রচনা করেন 'দুঃখীর ইমাম' নামের একটি নাটক। এছাড়াও 'মায়ের দাবি', 'পথিক', 'লক্ষ্মীপ্রিয়ার সংসার', 'মণিকাঞ্চন', 'মায়া কাজল', 'চোরাবালি' ও 'সর্বহারা' নামের বেশকিছু নাটক তিনি সৃষ্টি করেছেন। বাংলার উত্তরের কৃষক সমাজের বাস্তব জীবনচিত্র এসব নাটকের উপজীব্য। পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থার অসারতা প্রমাণ করার উদ্দেশ্যে নাটক রচনায় তিনি আত্মনিয়োগ করেন। ধনতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার অসারতা প্রমাণের উদ্দেশ্যে মার্ক্সবাদী দৃষ্টি দিয়ে তিনি নাটকগুলো রচনা করেন। 

১৯৪১ সালে দুর্গাদাস বন্দোপাধ্যায় 'মায়ের দাবি' নাটকটি বাণিজ্যিক মঞ্চে নিয়ে আসেন। ১৯৪৬ সালে শিশির ভাদুড়ি 'দুঃখের ইমাম' নাটকটি মঞ্চে নিয়ে আসেন। ১৯৪৯ সালে 'বহুরূপী' নাট্যগোষ্ঠী 'পথিক' নাটকটি প্রযোজনা করেছেন। ১৯৫০ সালে শম্ভু মিত্রের পরিচালনায় ছেঁড়া তার প্রদর্শিত হয়। তুলসী লাহিড়ী রচিত নাটকগুলো বাস্তব জীবনভিত্তিক নাট্যচর্চার গোড়াপত্তনে সহায়তা করেছিল৷ নাট্যকার হিসেবে তাঁর খ্যাতি সর্বজন বিদিত। 
 
তথ্যসূত্র- বঙ্গভারতী ব্লগ, পাঠ-সংকলন

No comments