বর্তমান প্রজন্মের ব্যস্ততম নাট্যকার ও চলচ্চিত্র অভিনেতা অর্ণ মুখোপাধ্যায়ের সাক্ষাৎকার
"আমার ভবিষ্যৎ মানে আমি এই মূহুর্তের কথা সবচেয়ে বেশি ভাবি। ভবিষ্যতে কত টাকা কামাবো, বাড়ি হবে, গাড়ি হবে বা বছরে আমাকে ছটা ছবি করতে হবে নাহলে হবেনা এমনটা আমার কোনো পরিকল্পনা নেই। আমার এই মুহূর্তে মনে হয় আজকের দিনটা আমি কীভাবে বাঁচবো। আগামীকাল আমি কীভাবে বাঁচবো।"
'কবীর', 'হইচই আনলিমিটেড', 'শেষের গল্প' ছবি ও 'সুফিয়ানা' ওয়েব সিরিজের অন্যতম অভিনেতা অর্ণ মুখোপাধ্যায়। যিনি সিনেমার অভিনেতা ছাড়াও বর্তমান প্রজন্মের একজন ব্যস্ততম নাট্যকার। লিটারেসি প্যারাডাইস নিউজ পোর্টালের নেওয়া তাঁর একটি ইন্টারভিউ রইল আপনাদের জন্য।
লিটারেসি প্যারাডাইস- আপনি 'কবীর', 'হইচই আনলিমিটেড' ও 'শেষের গল্প' ছবিতে অভিনয় করেছেন। এই ছবিগুলো করে আপনার কীরকম অভিজ্ঞতা অর্জন হলো?
অর্ণ মুখোপাধ্যায়- চমৎকার একটা অভিজ্ঞতা অর্জন হলো। যেমন একটা শিল্পের কাজ করলে একটা মানুষ যেভাবে তার জীবন এবং তার কাজেও মানুষ যেমন লিপ্ত হয়। ভালো ভালো ডাইরেক্টরদের সাথে কাজ করলে, ঠিকঠাক ভাবে একসাথে কাজ করে যে পজিটিভ এক্সাইটমেন্ট অ্যাডেড হয় বা সঞ্চয় হয়। সেই পজিটিভ এক্সাইটমেন্টটা ভালো কাজ করলে বা মিনিংফুল কাজ করলে যেমনটা হয়। ঠিক তেমনটাই হয়েছে। চমৎকার অভিজ্ঞতা হয়েছে।
লিটারেসি প্যারাডাইস- আড্ডা টাইমসের 'সুফিয়ানা' ওয়েব সিরিজে আপনি একজন পুলিশ অফিসারের চরিত্রে অভিনয় করেছেন আর 'কবীর' ছবিতে একজন সন্ত্রাসবাদীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এরকম চরিত্রে আপনার অভিনয় করতে কীরকম লাগে?
অর্ণ মুখোপাধ্যায়- চমৎকার লাগে। আমি সেইসব চরিত্রের অভিনয় করতে ভালোবাসি। যে সমস্ত চরিত্রগুলো একমাত্রিক নয়। মানুষ তো জীবনে যেমন একমাত্রিক নয়। মানুষের মধ্যে যেমন অনেক রঙ থাকে। তেমন আমি যে চরিত্রটাতে অভিনয় করছি, সেই চরিত্রগুলোর মধ্যে যদি স্তর থাকে। সেই স্তরগুলো দেখানো একটা চ্যালেঞ্জ হয়। গোটা একটা সাদা লোক কিংবা গোটা একটা কালো লোক এমনভাবে তো মানুষ হয়না। মানুষ তো বিভিন্ন রঙ মেনে হয়। ফলে একটা চরিত্রের মধ্যে যত রকম রঙ থাকবে তত অ্যাক্টরের কাছে চ্যালেঞ্জ হবে। এবং সেখানে অভিনয় তো আর কোনো প্রোডাক্ট নয়, অভিনয় করতে করতে একটা জীবনযাপনের মতো। একটা চর্চার মধ্যে প্রতি মুহূর্তে নিজেকে নিজের থেকে শেখা এবং ডিরেক্টরের বাকী যারা কাজ করছে এবং জীবন থেকে শেখা। এই অনন্ত চর্চার প্রসেসটা এই ধরণের চরিত্র করলে আরো জোরদার হয় বা গাঢ় হয়। সেটা হয়েছে।
লিটারেসি প্যারাডাইস- আপনি সিনেমার পাশাপাশি নাটকেও অভিনয় করেন। এমনকি নাটক পরিচালনাও করেন। নাটকে অভিনয় নাকি চলচ্চিত্রে অভিনয়। কোনটাকে আপনি আগে রাখবেন?
অর্ণ মুখোপাধ্যায়- আমি কেন আগে রাখতে যাবোই বা। আমার কিই বা দায় পড়েছে কোনো একটা অভিনয়কে, কোনো একটা মাধ্যমকে আলাদা করে এগিয়ে রাখার। আমি তো মূলত অভিনেতা। আমাকে যে অভিনয় মাধ্যমে অভিনয়ের কথা বলা হবে সেটা নাটক হোক, ফিল্ম হোক, যাত্রা হোক, যে-কোনো মাধ্যম হোক। আমার কাছে সেই কাজটা যদি চ্যালেঞ্জিং হয় বা কাজটি যদি আমাকে স্বীকার করে, তাহলে সেই মুহূর্তে সেই কাজটিকে আমি এগিয়ে রাখবো। কম্লিমেন্টারি বা কর্মক্ষেত্রে হোক বা যে-কোনো কারণেই হোক, কার্য কারণে আমি বেশিদিন থিয়েটার করছি। কমদিন ছবি করছি। কারণ এই নয় যে কমদিন করি বলে ছবির প্রতি আমার কমবেশি প্রেম, থিয়েটারের প্রতি কম-বেশি। আমি যখন যে কাজটা করি তখন তা খুব মন দিয়ে করি। মনে করি এই মুহূর্তে এটাই আমার কাছে সেরা কাজ।
লিটারেসি প্যারাডাইস- আপনার পরবর্তী কাজ বা প্রজেক্টগুলো কী কী?
অর্ণ মুখোপাধ্যায়- প্রজেক্ট বলতে এই মুহূর্তে একটা ছবির কথা হয়ে রয়েছে যতক্ষণ না চুক্তি হচ্ছে ততক্ষণ আমি ছবিটার কথা বলতে পারছি না। আরেকটা ওয়েব সিরিজে কাজের কথা চলছে এবং মোস্ট ইম্পর্ট্যান্টলি আমার তিনটে থিয়েটার চলছে এটুকুই। থিয়েটারগুলো আমার কাছে এখন প্রায় খুব কমিটম্যান্টের জায়গা। খুব ইম্পর্ট্যান্ট জায়গা। কাজেই ছবির কাজ না থাকলেও আমার হাতে এমন কাজ থাকে যাতে আমি চব্বিশ ঘন্টা ব্যস্ত থাকতে পারি সেটা হলো থিয়েটার।
লিটারেসি প্যারাডাইস- অভিনয় জগতে পা রাখার পিছনে কার অবদান সবচেয়ে বেশি বলে মনে হয় আপনার?
অর্ণ মুখোপাধ্যায়- আমার নিজের। আমার নিজের ইচ্ছা, আমার নিজের প্যাশন, আমার নিজের ভালো লাগা। সেই কারণেই অভিনয়ে আসা ৷ আমার মনে হয় সেই কাজটার মধ্যে যা মজা আছে, যে কাজটা হয়তো আমি অন্য কিছুতে পাইনা। হয়তো খানিকটা খেলাধূলোও করতাম যখন সময় পেতাম। তো এখন এই মূহুর্তে আমার মনে হয় অভিনয়ের থেকে বেশি আনন্দ এই পৃথিবীতে আমি আর কোনোকিছুতে পাইনা। ফলে এর পিছনে আলাদা করে কোনো ব্যক্তির অবদান এমনটা আমি বলতে পারিনা৷ তবে নিশ্চয় আমার পারিবারিক সূত্রে পাওয়া। আমার বাবা নিজে একজন থিয়েটার ডিরেক্টর এবং রাইটার। সেটাই হয়তো কোথাও গিয়ে ডিএনএ তে কাজ করেছে বা তাকে আমি সামনের থেকে দেখেছি৷ যদি কোনো ব্যক্তির নাম করতেই হয় তাহলে তিনি হলেন আমার বাবা।
লিটারেসি প্যারাডাইস- ভবিষ্যতে সিনেমা পরিচালনা করতে কখনো কী আপনাকে দেখা যেতে পারে?
অর্ণ মুখোপাধ্যায়- নিশ্চয় দেখা যেতে পারে। যদি সময় হয়, সুযোগ হয়, প্রডিউসার পাই। তাহলে নিশ্চয় কখনো না কখনো ফিল্ম পরিচালনা করবো।
লিটারেসি প্যারাডাইস- আপনি পেশা হিসেবে অভিনয়কেই কেন বেছে নিলেন?
অর্ণ মুখোপাধ্যায়- ঐ যে বললাম, এই কাজটি করে আমি সবচেয়ে বেশি আনন্দ পাই৷ ফলে পেশা এবং নেশা যদি মিল হয়। তাহলে তার থেকে আনন্দের তো আর কিছু হতে পারেনা।
লিটারেসি প্যারাডাইস- আজকাল উন্নত কন্টেন্টের প্রচুর ভালো ভালো বাংলা ছবি হচ্ছে। তা সত্ত্বেও যারা হলমুখী হননা তাদের আপনি কী বলতে চান?
অর্ণ মুখোপাধ্যায়- যারা হলমুখী হননা সেটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার। কাউকে তো আর জোর করে ঘেঁটি ধরে চলো হলে চলো, সিনেমা দেখো এমন বাধ্যকতা তো বলা যায়না৷ সবকাজ ভালো হয়ও না। তাদের দোষ নেই। তাদের হাতে আরো অনেক কিছু আছে যেটা তারা জীবনে করতে পারে। তাই তারা হলে যাননা। ফলে আমার পক্ষে নাই ঘুমোনোই ভার। আমি ঘেঁটি ধরে বলবো না যে সিনেমা দেখুন। যাদের সিনেমার প্রতি প্যাশন আছে। যেমন আমাকে তো আর কেউ ঘেঁটি ধরে বলেনি যে অভিনয় করবে চলো। আমার প্যাশন আছে, ভালো লাগছে তাই করছি। নিশ্চয় কিছু রসবেত্তা মানুষ চিরকাল এই পৃথিবীতে এসেছেন আবার যাবেন। ফলে কারোর জন্য কোনোকিছু থেমে থাকেনা৷ যেমন একজন অভিনেতা একজন মানুষ হলেই থিয়েটার চলে। তেমন কিছু মুষ্টিমেয় মানুষ হলেই সিনেমা চলে। এটা সবার জন্যে নয়৷ শিল্প কখনোই সবার জন্যে নয়। ফলে আমার ওরকম মনে হয়না যে প্রচুর মানুষ আমার কাজ দেখবে। মজা পাবে এমনটা কিন্তু নয়। কম মানুষ দেখলেও আমার কোনো ক্ষতি নেই। তাদের রসবেত্তা হতে হবে। সেনসেটিভ হতে হবে। বরং কম মানুষ দেখলেই আমি আনন্দ পাবো।
লিটারেসি প্যারাডাইস- আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
অর্ণ মুখোপাধ্যায়- আমার ভবিষ্যৎ মানে আমি এই মূহুর্তের কথা সবচেয়ে বেশি ভাবি। ভবিষ্যতে কত টাকা কামাবো, বাড়ি হবে, গাড়ি হবে বা বছরে আমাকে ছটা ছবি করতে হবে নাহলে হবেনা এমনটা আমার কোনো পরিকল্পনা নেই। আমার এই মুহূর্তে মনে হয় আজকের দিনটা আমি কীভাবে বাঁচবো। আগামীকাল আমি কীভাবে বাঁচবো। আমার চরিত্রটিতে যাতে খামতি না হয়৷ আর আনন্দ পাচ্ছি কিনা কাজটি করে। এটা আমার কাছে সবচেয়ে বেশি ইম্পর্ট্যান্ট। এর বাইরে আমার কোনো পরিকল্পনা নেই৷
সৌজন্যে-সুমিত দে
Post a Comment