বাংলার অগ্নিকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার
বয়স মাত্র একুশ। পরনে মালকোঁচা ধুতি। মাথায়
গৈরিক পাগড়ি, গায়ে লাল ব্যাজ লাগানো
শার্ট। ইনিই দলনেতা। এক হাতে রিভলবার, অন্য হাতে হাতবোমা। দলের
সদস্য সংখ্যা আট। সবার পরনে রাবার সোলের কাপড়ের জুতো। সবাই প্রস্তুত। ১৯৩২ সালের
২৩ শে সেপ্টেম্বর,শনিবার, সময় রাত ১০টা বেজে ৪৫ মিনিট। দলনেতা বলে উঠলেন ‘চার্জ’। সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ল শত্রুদের
ওপর। প্রায় ৪০ জন তখন ক্লাবে মত্ত নাচ-গানে। পিকরিক অ্যাসিডে তৈরি বোমাটি বর্জ্রের
মতো ভয়ংকর শব্দে ফেটে পড়ল; হলঘরে তখন শুধু ধোঁয়া।
দলনেতাই এগিয়ে গেল সবার আগে। অথচ এটাই তার প্রথম অভিযান। ক্লাবঘরের সব বাতি নিভে
গেল। বোমার বিস্ফোরণ, গুলির শব্দ, শত্রুর মরণ চিৎকার-সব মিলে
এলাকাটা যেন পরিণত হলো এক দক্ষযজ্ঞে! এটা কোনো অ্যাডভেঞ্চার ফিল্মের দৃশ্য নয়। এটি
ইতিহাসের এক অনন্য ঘটনা। আমরা আরও রোমাঞ্চিত হই- যখন জানি, ২১ বছরের সেই দলনেতা পুরুষ বেশে একজন নারী! নাম প্রীতিলতা
ওয়াদ্দেদার। চট্টগ্রামের পাহাড়তলী ইউরোপীয়ান ক্লাব আক্রমণে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন
সেই বাঙালি নারী। পরাক্রমশালী ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন ‘প্রীতিলতা’। আক্রমণে অংশ নেওয়া
কালীকিংকর দে, বীরেশ্বর রায়, প্রফুল্ল দাস, শান্তি চক্রবর্তীর পোশাক
ছিল ধূতি আর শার্ট। মহেন্দ্র চৌধুরী, সুশীল দে আর পান্না সেনের
পরনে ছিল লুঙ্গি আর শার্ট । তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে বিপ্লবীরা
ক্লাব আক্রমণ শুরু করেন। পূর্বদিকের গেট দিয়ে ওয়েবলি রিভলবার এবং বোমা নিয়ে
আক্রমণের দায়িত্বে ছিলেন প্রীতিলতা, শান্তি চক্রবর্তী আর
কালীকিংকর দে। ওয়েবলি রিভলবার নিয়ে সুশীল দে আর মহেন্দ্র চৌধুরী ক্লাবের
দক্ষিণের দরজা দিয়ে এবং ৯ ঘড়া পিস্তল নিয়ে বীরেশ্বর রায়, রাইফেল আর হাতবোমা নিয়ে পান্না সেন আর প্রফুল্ল দাস
ক্লাবের উত্তরের জানালা দিয়ে আক্রমণ শুরু করেছিলেন। ক্লাবে উপস্থিত কয়েকজন ইংরেজ
অফিসার রিভলবার দিয়ে পাল্টা আক্রমণ চালায়।
আক্রমণ শেষে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার সময় একজন অফিসারের গুলিতে প্রীতিলতা আহত হন। প্রীতিলতা আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে, ব্রিটিশদের হাত থেকে বাঁচতে ক্লাব আক্রমণের পরেই তিনি আত্মহনন করবেন। সহযোদ্ধা কালীকিংকরকে নিজের কাছে থাকা রিভলবার ফেরত দিয়ে সঙ্গে রাখা পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়ে আত্মাহত্যা করেন তিনি। কারণ তিনি চাননি বিপ্লবীদের গোপন তথ্য ব্রিটিশ পুলিশের মারের মুখে ফাঁস করতে। প্রীতিলতা মারা যাওয়ার আগে মায়ের কাছে লিখেছিলেন, 'মাগো, অমন করে কেঁদোনা! আমি যে সত্যের জন্য, স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিতে এসেছি, তুমি কি তাতে আনন্দ পাও না? কী করব মা? দেশ যে পরাধীন! দেশবাসী বিদেশির অত্যাচারে জর্জরিত! দেশমাতৃকা যে শৃঙ্খলভাবে অবনতা, লাঞ্ছিতা, অবমানিতা! তুমি কি সবই নীরবে সহ্য করবে মা? একটি সন্তানকেও কি তুমি মুক্তির জন্য উৎসর্গ করতে পারবে না? তুমি কি কেবলই কাঁদবে?' পরদিন পুলিশ ক্লাব থেকে ১০০ গজ দূরে প্রীতিলতার মৃতদেহ পড়ে থাকে। তিনি প্রমাণ করেছিলেন বাংলার মেয়েরাও পারে মাতৃভূমির স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গ করতে।
প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ছিলেন মাস্টারদা সূর্য
সেনের মানসকন্যা । মাস্টারদাকে তিনি প্রশ্ন
করেছিলেন, ‘‘মেয়েদের আপনারা দলে নিতে
চাইতেন না কেন দাদা? তাঁরা কি দেশসেবার যোগ্য
নন?’’ মাস্টারদা জবাব দিয়েছিলেন, ‘‘না, দেশসেবার কঠিন কর্তব্য থেকে
মেয়েদের বঞ্চিত করা চলে না। দেশসেবায় নরনারী ভেদ নেই।“মাস্টারদার পাশে তখন রাখা আয়ারল্যান্ডের বিপ্লবী ড্যানিয়েল
ব্রিন-এর সেই বিখ্যাত বই, ‘মাই ফাইট ফর আইরিশ ফ্রিডম’। বইটা পড়ার জন্য হাতে তুলে নিয়েছিলেন প্রীতিলতা।
মাস্টারদার নির্দেশেই রাণী (প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের ডাকনাম) গৃহত্যাগ করেন। ১৯৩২
সালের ২৩শে সেপ্টেম্বর, ইউরোপিয়ান ক্লাবে
প্রীতিলতার নেতৃত্বে আক্রমণের আগে মাষ্টারদাই তাঁকে সাজিয়ে দেন | চলে যাওয়ার আগে প্রীতিলতা বলেছিলেন, ‘‘আমি কিন্তু আর ফিরে আসব না দাদা। এক জনকে তো জীবন দিয়েই
শুরু করতে হবে। মানুষ মনে করে, মেয়েরা অক্ষম, মেয়েরা দুর্বল। ভ্রান্ত এই ধারণা ছিন্ন করার সময় এসেছে। তা
হলেই আমার বিশ্বাস, বাংলার বোনেরা দুর্বলতা
ত্যাগ করবে, হাজারে হাজারে যোগ দেবে
বিপ্লবী সংগ্রামে।’’ প্রীতিলতার মৃত্যুর পর
সূর্য সেন লিখেছেন, ‘সাজিয়ে দিয়ে যখন করুণভাবে
বললাম, তোকে এই শেষ সাজিয়ে দিলাম। তোর দাদা তো তোকে
জীবনে আর কোনোদিন সাজাবে না, তখন রাণী একটু হেসেছিল। কী
করুণ সে হাসিটুকু!’
প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ১৯১১ সালের ৫ই মে
মঙ্গলবার চট্টগ্রামের বর্তমান পটিয়া উপজেলার ধলঘাট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর
পিতা ছিলেন মিউনিসিপ্যাল অফিসের হেড কেরানী জগদ্বন্ধু ওয়াদ্দেদার এবং মাতা
প্রতিভা দেবী। তাঁদের ছয় সন্তানঃ মধুসূদন, প্রীতিলতা, কনকলতা, শান্তিলতা, আশালতা ও সন্তোষ। তাঁদের পরিবারের আদি পদবী ছিল দাশগুপ্ত।
পরিবারের কোন এক পূর্বপুরুষ নবাবী আমলে “ওয়াহেদেদার” উপাধি পেয়েছিলেন, এই ওয়াহেদেদার থেকে
ওয়াদ্দেদার। শৈশবে পিতার মৃত্যুর পর
জগদ্বন্ধু ওয়াদ্দেদার তাঁর পৈতৃক বাড়ি ডেঙ্গাপাড়া সপরিবারে ত্যাগ করেন। তিনি
পটিয়া থানার ধলঘাট গ্রামে মামার বাড়িতে বড় হয়েছেন। এই বাড়িতেই প্রীতিলতার
জন্ম হয়। আদর করে মা প্রতিভাদেবী তাঁকে “রাণী” ডাকতেন। পরবর্তীকালে চট্টগ্রাম শহরের আসকার খানের দীঘির
দক্ষিণ-পশ্চিম পাড়ে টিনের ছাউনি দেওয়া মাটির একটা দোতলা বাড়িতে স্থায়ীভাবে
থাকতেন ওয়াদ্দেদার পরিবার।
প্রীতিলতার পড়াশুনার হাতেখড়ি বাবা, মায়ের কাছে। তাঁর স্মৃতিশক্তি ছিল অসাধারণ। যে কারণে জগদ্বন্ধু
ওয়াদ্দেদার মেয়েকে অন্যতম নারী শিক্ষালয়
ডা.খাস্তগীর উচ্চ ইংরেজি বালিকা বিদ্যালয়ে সরাসরি তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি করান।
এই নামকরা স্কুলে প্রতিটি শ্রেণীতে তিনি প্রথম কিংবা দ্বিতীয় ছিলেন। অষ্টম শ্রেণীতে
প্রীতিলতা বৃত্তি পান। প্রীতিলতার নিকট-আত্মীয় পূর্ণেন্দু দস্তিদার তখন বিপ্লবী
দলের কর্মী। তিনি সরকার কর্তৃক বাজেয়াপ্ত কিছু গোপন বই প্রীতিলতার কাছে রাখেন। তখন
তিনি দশম শ্রেনীর ছাত্রী। লুকিয়ে লুকিয়ে তিনি পড়েন “দেশের কথা”, “বাঘা যতীন”, “ক্ষুদিরাম” আর “কানাইলাল”। এই সমস্ত গ্রন্থ
প্রীতিলতাকে বিপ্লবের আদর্শে অনুপ্রাণিত করে। ওই স্কুল থেকে প্রীতিলতা ১৯২৭ সালে
প্রথম বিভাগে মেট্রিক পাস করার পর ভর্তি হন ঢাকার ইডেন কলেজে। থাকেন কলেজের
ছাত্রীনিবাসে। এ সময় প্রীতিলতা বিপ্লবী লীলা নাগের সংস্পর্শে আসেন। বিপ্লবী লীলা
নাগ তখন 'দীপালী সংঘ' সংগঠনের নেতৃত্বে| দীপালী সংঘ ছিল বিপ্লবী দল 'শ্রীসংঘ'-এর মহিলা শাখা সংগঠন। লীলা
নাগের সাথে প্রীতিলতার 'দীপালী সংঘ' নিয়ে কথা হল। কথাবার্তার মাধ্যমে লীলা নাগ বুঝে নিলেন
প্রীতিলতাকে দিয়ে দেশের কাজ হবে। তাই লীলা নাগ তাঁকে 'দীপালী সংঘে'র সদস্য হওয়ার জন্য একটি
ফর্ম দিয়ে বললেন, 'তুমি এর উদ্দেশ্য ও আদর্শের
সাথে একমত পোষণ করলে বাড়ী থেকে এসে ফর্মটি পূরণ করে দিও।' বাড়ী আসার পরের দিন তিনি ওই ফর্মটি পূর্ণেন্দু দস্তিদারকে
দেখিয়ে বললেন, "দাদা, আমি এই সংঘের সাথে কাজ করবো।
তোমরা তো আর আমাকে তোমাদের দলে নিবে না, তাই এখানে যুক্ত
হয়ে আমি দেশের জন্য কাজ করব। পূর্ণেন্দু দস্তিদার ওই ফর্মটি প্রীতিলতার কাছ থেকে নিয়ে গেলেন এবং বললেন, "দলনেতাকে দেখিয়ে তোমাকে এটি ফেরত দিব"।
পূর্ণেন্দু দস্তিদার প্রীতিলতার কাছ থেকে ফর্মটি নেওয়ার পরের দিন বিকেল বেলা বিপ্লবীদের গোপন বৈঠকে উপস্থিত হলেন। বৈঠক শেষে জেলা কংগ্রেসের কার্যালয়ে তিনি মাস্টারদা সূর্য সেনকে ওই ফর্মটি দেখালেন এবং প্রীতিলতার মনের কথাগুলো বললেন। মাস্টারদা সূর্য সেন সবকিছু শুনে পূর্ণেন্দু দস্তিদারকে বললেন, "আজ থেকে আমরা প্রীতিলতাকে আমাদের দলের সদস্য করে নিলাম। কিন্তু এই কথা আপাতত আমরা তিনজন ছাড়া অন্য কাউকে জানানো যাবে না। প্রীতিলতাকে একদিন আমার কাছে নিয়ে এসো।"
মাস্টারদার নির্দেশেই মাত্র ১৯ বছর বয়সে গৃহত্যাগ করেন
প্রীতিলতা। তাঁকে আগেই নির্মল সেন বলেছিলেন, " মাস্টারদার সঙ্গে কথা বলো৷ এই মানুষটি কিন্তু অতল। ওর তল পাবে না। আমাদের মতো মানুষ ঢের পাবে। কিন্তু এর মতো পাবেনা।"
আর রানিকে প্রথম দেখে মাস্টারদার মনে হয়েছিল, "দেখলাম তাঁর মধ্যে অহংকারের
লেশমাত্র নেই। মনে হল, একজন ভক্তিমতী মেয়ে হাতে প্রদীপ নিয়ে আরতি দেবার জন্য দেবতার
মন্দিরে ভক্তি ভরে এসে দাঁড়িয়েছে।" মাস্টারদা বলেছিলেন, "শুনেছি অনেক বার তুমি গিয়েছ রামকৃষ্ণের কাছে। আজ তোমার মুখে শুনব ওর কথা"।
ছোট বোন অমিতা, এই পরিচয় দিয়ে মৃত্যুপথযাত্রী বিপ্লবী রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের সঙ্গে আলিপুর
সেন্ট্রাল জেলে অনেক বার দেখা করেছিলেন প্রীতিলতা। রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের ফাঁসির পরই তিনি কলকাতা ছেড়ে
চট্টগ্রাম ফিরে আসেন। কিছুদিন পর প্রীতিলতার আই. এ. পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। তিনি মেয়েদের মধ্যে প্রথম স্থান ও সবার মধ্যে পঞ্চম
স্থান অধিকার করেন। মাসিক কুড়ি টাকা বৃত্তি পাবেন তিনি। ঠিক হলো কলকাতার বেথুন কলেজে ছাত্রীনিবাসে থেকে
পড়াশুনা করবেন। ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে বি.এ ভর্তি হলেন প্রীতিলতা। রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের ফাঁসির পর থেকে তিনি বি.এ
পরীক্ষা না দেওয়ার জন্য মনঃস্থির করেন।
কিন্তু তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষীদের অনুরোধে শেষ পর্যন্ত বি.এ পরীক্ষা দিয়ে ১৯৩২
সালে তিনি ডিসটিংকশনে পাস করলেন। কিন্তু ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে জড়িত থাকার কারণ তার সনদ বাতিল করে দেওয়া
হয়। ২০১২ সালের ২২ শে
মার্চ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে তাঁকে মরণোত্তর স্নাতক ডিগ্রি প্রদান করা
হয়।
১৯৩২ সালের মে মাসে প্রীতিলতার জন্মস্থান ধলঘাটে
সাবিত্রী দেবীর বাড়িতে মাস্টারদা তাঁর সহযোদ্ধাদের সঙ্গে গোপনে বৈঠক করেন। এই বৈঠক চলার সময় ব্রিটিশ সৈন্যদের সঙ্গে
বিপ্লবীদের বন্দুক যুদ্ধ শুরু হয়। যুদ্ধে প্রাণ দেন নির্মল সেন ও অপূর্ব সেন। সূর্য সেন প্রীতিলতাকে নিয়ে ডোবা ও গাছের আড়ালে
লুকিয়ে থাকেন। সৈন্যরা চলে যাওয়ার পর মাস্টারদা বলেন, 'প্রীতি তুমি বাড়ি ফিরে গিয়ে
স্কুলের কাজে যোগ দেবে, তাহলে গত রাতের ঘটনায়
কেউ তোমাকে সন্দেহ করবে না।'
সাবিত্রী দেবীর বাড়িটি পুলিশ পুড়িয়ে দেয়। এই ঘটনার পর ব্রিটিশ সরকার প্রীতিলতাকে সন্দেহ
করা শুরু করে। মাস্টারদার নির্দেশে তিনি আত্মগোপনে চলে যান। অন্য একটি বিপ্লবী গ্রুপ ইউরোপীয়ান ক্লাব আক্রমণে
ব্যর্থ হয়। যার কারণে মাস্টারদা প্রীতিলতাকে ইউরোপীয়ান ক্লাব আক্রমণের প্রস্তুতি নিতে
বলেন ও মাস্টারদার থেকে সামরিক প্রশিক্ষণ নেন৷ পুলিশের রিপোর্ট অনুযায়ী ১৯৩২ সালের
২৩ শে সেপ্টেম্বর ইউরোপীয়ান ক্লাব আক্রমণে মিসেস সুলিভান নামে একজন নিহত হয় এবং এগারো
জন আহত হয়।
প্রীতিলতার সর্বক্ষণের সঙ্গী ছিলেন কল্পনা দত্ত। প্রীতিলতার মৃত্যুর পর তাঁর পরিবারের অবস্থা
নিয়ে কল্পনা দত্ত লিখেছেন- "প্রীতির বাবা শোকে দুঃখে পাগলের মতো হয়ে গেলেন, কিন্তু প্রীতির মা গর্ব করে
বলতেন, 'আমার মেয়ে দেশের কাজে প্রাণ দিয়েছে'। তাদের দুঃখের পরিসীমা ছিলনা, তবু তিনি
সে দুঃখকে দুঃখ মনে করেননি। ধাত্রীর কাজ নিয়ে তিনি সংসার চালিয়ে নিয়েছেন, আজও তাদের সেভাবে চলছে। প্রীতির কথা মনে পড়ে যায়, দীর্ঘনিশ্বাস ফেলেন"।
পরাধীনতার হাত থেকে প্রিয় স্বদেশকে মুক্ত করার জন্যে
জীবন উৎসর্গ করেছেন প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। দেশপ্রেম আর স্বদেশের মঙ্গল চিন্তায় এই মহীয়সী
নারী যুগে যুগে আমাদের আদর্শ ও অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন।
নারী জাগরণের দিব্য প্রদীপ শিখা জ্বেলে সংগ্রাম ও চেতনায়
নারী সমাজকে জাগিয়ে তোলেন তিনি। প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ব্রিটিশদের হাত থেকে দেশকে স্বাধীন করার জন্য নিজেকে
গড়ে তোলার পাশাপাশি অসংখ্য বিপ্লবীদের প্রশিক্ষিত, অনুপ্রাণিত ও উজ্জীবিত করে
গেছেন। তিনি বাংলা ও বাঙালি জাতির গর্ব।
জয় বাংলা।
Post a Comment