মধ্য কলকাতায় অনুষ্ঠিত হলো 'দোতারা ও ডুবকি প্রশিক্ষণ কর্মশালা এবং লোকসংগীত উৎসব ২০১৯'
‘দোতারা বাজাই' আন্তর্জাতিক দলের আয়োজনে মধ্য কলকাতায়, ১লা মে, ২০১৯ অর্থাৎ মে দিবসে অনুষ্ঠিত হয় 'দোতারা ও ডুবকি প্রশিক্ষণ
কর্মশালা এবং লোকসংগীত উৎসব ২০১৯'।
লোকসংগীত বাংলার একটি
ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন সমৃদ্ধ ধারা । এই লোকসংগীত ও লোকবাদ্যযন্ত্র গুলিকে দীর্ঘজীবি করতে এবং
তার চর্চা ও প্রচারের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী প্রসারের উদ্দেশ্য নিয়েই কয়েক বছর আগে কলকাতা ও ঢাকার কয়েকজন
সংগীতপ্রেমী তরুণের উদ্যোগে "দোতারা বাজাই" নামে একটি অনলাইন গ্রূপের
জন্ম হয়। ক্রমশ জনপ্রিয় হতে থাকা এই গ্রূপের বর্তমান সদস্য সংখ্যা অনেক। এপার
বাংলা ওপার বাংলা ছাড়াও সুদূর আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি
দেশের দোতারা বাদকরাও (প্রবাসী বাঙালি) এতে যুক্ত হয়েছেন ও বিভিন্ন দেশে বাংলার
লোকসংগীতকে প্রসারিত করার নিরলস প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন। অনলাইনে নিজেদের
শিল্প-কুশলতা আদান-প্রদানের মাধ্যমে তাঁরা সদা সর্বদা রক্ষা করে চলেছেন বাংলার
নানান দেশজ বাদ্যযন্ত্রের ঐতিহ্যকে। প্রতিবছর কোলকাতায় এবং ঢাকায় প্রশিক্ষণ
কর্মশালার আয়োজন করে চলেছে এরা।
সম্প্রতি মধ্য কলকাতায়
বৌদ্ধ ধর্মাঙ্কুর সভাগৃহে আয়োজিত হয়েছিল এই গ্রূপের তৃতীয় বর্ষের একদিনের
দোতারা ও ডুবকি কর্মশালা এবং লোকবাদ্য যন্ত্রের সংগীতানুষ্ঠান। পশ্চিমবঙ্গের
বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন বয়সের মানুষ ছাড়াও বাংলাদেশ থেকে অংশগ্রহণ করেছিলেন
সেখানকার শীর্ষ স্থানীয় বেশ কয়েকজন দোতারা বাদক ও লোকসংগীত শিল্পী।
সমগ্র অনুষ্ঠানটির আয়োজক
ছিলেন 'দোতারা বাজাই' এর কোলকাতা শাখার কার্যপরিচালক , কৌশিক রায়(পাউ) ও সৌমেন্দু দাস এবং আন্তরিক
সহায়তায় ছিলেন শ্রী গোপাল দাস।
সদ্যপ্রয়াত বরেণ্য
লোকসংগীত শিল্পী শ্রী অমর পালের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে অনু্ষ্ঠানের সূচনা হয়।
এরপর সমবেত কন্ঠে দোতারা সহযোগে দুই দেশের অসংখ্য মানুষের সমবেত কন্ঠে ভারত ও বাংলাদেশের
জাতীয় সংগীত গাওয়া হয়। মূল কন্ঠে ছিলেন কোলকাতার বিশিষ্ট লোকসংগীত শিল্পী শ্রী
দীপেন ভট্টাচার্য। এরপর প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে অনু্ষ্ঠানের শুভ সূচনা হয়।
অতঃপর শুরু হয় প্রথমে দোতারা প্রশিক্ষণ কর্মশালা এবং তারপর বাংলায় সম্ভবত প্রথমবার
লোকবাদ্য ডুবকি প্রশিক্ষণ কর্মশালা।
দোতারার প্রশিক্ষক হিসেবে
উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের দুই বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী শ্রী নিখিল কৃষ্ণ মজুমদার ও
শ্রী অনুপম বিশ্বাস এবং কোলকাতার গুণী শিল্পী শ্রী দেবব্রত দে ছিলেন দোতারা ও
ডুবকি উভয়েরই প্রশিক্ষণে।
কর্মশালার পর বিশিষ্ট
প্রশিক্ষকগণ বিভিন্ন বয়সী অংশগ্রহণকারীদের হাতে সংশাপত্র তুলে দেন। এরপর অনুষ্ঠিত হয় মনোজ্ঞ লোকসংগীত উৎসব,
যার প্রধান আকর্ষণ ছিল দুই বাংলার বিশিষ্ট শিল্পীদের
বিভিন্ন প্রকার লোকবাদ্যযন্ত্র গুলির নানান অভূতপূর্ব চমকপ্রদ সংগীত পরিবেশনা।
যেমন :-
(১) দুই বাংলার গুণী
দোতারা বাদকরা একত্রে একই মঞ্চে সংগীত পরিবেশন করেন, ছিলেন বাংলাদেশের শ্রী অনুপম বিশ্বাস, শ্রী সুমন কুমার শীল, মোঃ সুমন হোসেন এবং কলকাতার শ্রী সুভাষ বর্মন, শ্রী জয়ন্ত সাহা, শ্রী রোহিত রায়, শ্রী সৌমেন্দু
দাস।
(২) দুই বাংলার বিশিষ্ট
দুই বংশীবাদক শ্রী নিখিল কৃষ্ণ মজুমদার (বাংলাদেশ) ও শ্রী অশোক কুমার কর্মকার (কলকাতা)
এক সাথে বাঁশিতে অনবদ্য সমবেত যুগলবন্দী পরিবেশন করেন।
(৩) বাংলার ইতিহাসে সম্ভবত
প্রথমবার চারটে ডুবকির একত্রে অসাধারণ তালবাদ্য পরিবেশন করেন শ্রী দেবব্রত দে,
শ্রী সব্যসাচী মুখার্জী, শ্রী অনির্বাণ ব্যানার্জী ও শ্রী সম্রাট নিয়োগী।
(৪) বিরল লোকবাদ্যযন্ত্র
সারিন্দা তে লোকসুর পরিবেশন করেন শ্রী গোবিন্দ দে সাথে ঢোল সঙ্গতে শ্রী সুমন সিং ।
(৫) কলকাতার বিশিষ্ট
লোকসংগীত শিল্পী শ্রী তীর্থ ভট্টাচার্য্য বিগত দুই বছরের মত এবারো দোতারা সহযোগে
লোকসংগীত পরিবেশন করে দর্শকদের মাতিয়ে দেন।
(৬) বাংলাদেশের বিশিষ্ট
লোকসংগীত শিল্পী বাউল গরীব মুক্তার দুটি অসাধারণ লোকগান গেয়ে সকলের মন জয় করেন। তারপর
একটি অনবদ্য লোকগান করেন বাংলাদেশের শিল্পী শহিদুল ইসলাম।
(৭) কলকাতার বিশিষ্ট লোকসংগীত
শিল্পী শ্রী শুভব্রত সেনের পরিচালনায়, "মাটির গান" লোকগানের দলের সদস্যরা বিভিন্ন প্রকার
লোকবাদ্যযন্ত্র ও চারটি অনবদ্য লোকগান পরিবেশন করেন।
(৮) বাঁশিতে সমবেত ভাবে
অনবদ্য লোকসুর পরিবেশন করেন, বিভিন্ন বয়সের
পুরুষ ও নারী সদস্যদের সমন্বিত দল "মেলোডিকা"।
সার্বিক অনুষ্ঠানে
বিভিন্ন প্রকার পার্কাসান বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে সঙ্গত করেন কোলকাতার অত্যন্ত গুণী
সংগীত শিল্পী শ্রী সব্যসাচী মুখার্জী ও শ্রী দেবব্রত দে এবং দোতারা সঙ্গত করেন
আরো দুই অত্যন্ত গুণী শিল্পী শ্রী সুভাষ বর্মন ও শ্রী জয়ন্ত সাহা।সমগ্র অনুষ্ঠানে তবলায় সঙ্গত করেন অঙ্কন মন্ডল ও সম্রাট নিয়োগী।প্রচার ও সহায়তায় ছিল 'হট্টমেলা'
সমগ্র অনুষ্ঠানটির
সঞ্চালনায় ছিলেন শ্রী কৌশিক রায় (পাউ)। অনুষ্ঠান চলাকালীন দুই বাংলার বিশিষ্ট শিল্পীদের সম্বর্ধনা জ্ঞাপন করা হয়। বিশেষ সম্বর্ধনা জ্ঞাপন করা হয় কলকাতার
বর্ষিয়ান পার্কাসন যন্ত্রসংগীত শিল্পী শ্রী অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিশিষ্ট
লেখক শ্রী হেমেন্দু বিকাশ চৌধুরী মহাশয়কে।
পরিশেষে অনুষ্ঠানের
সমাপ্তি হয়, প্রয়াত বরেণ্য শিল্পী শ্রী
অমর পালকে শ্রদ্ধা জানিয়ে কলকাতার বিশিষ্ট লোকসংগীত শিল্পী শ্রী দীপেন
ভট্টাচার্য্যের গাওয়া ওনার মর্মস্পর্শী গানের মাধ্যমে।
'দোতারা বাজাই' আন্তর্জাতিক দলের পক্ষ থেকে কৌশিক এবং সৌমেন্দু জানান যে
দুই বাংলার এতো মানুষের সমর্থন, ভালোবাসা ও অংশগ্রহণে তারা আশাতীত উচ্ছ্বসিত এবং এই
অনুপ্রেরণাকে সম্বল করে ভবিষ্যতে বাংলা লোকসংগীত নিয়ে আরো অনেক প্রাচুর্যপূর্ণ
আয়োজন তাঁরা করে যাবেন।
প্রতিবেদন-অমিত দে
Post a Comment