Header Ads

আগামী ২রা মে সত্যজিৎ রায়ের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সিনেমাটেক কলকাতা বসাতে চলেছে চাঁদের হাট নন্দনে


বাংলা চলচ্চিত্রের কথা বললেই যার নাম সবার প্রথমে ভেসে আসে তিনি হলেন বিশ্ববিখ্যাত পরিচালক সত্যজিৎ রায়। যার হাত ধরে বাংলা চলচ্চিত্রের নাম ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বজুড়ে। তিনি হলেন একমাত্র ভারতীয় যিনি অর্জন করেছেন লাইফটাইম অ্যাচিভম্যান্ট অস্কার পুরস্কার। সত্যজিৎ রায়ের পর এখনো পর্যন্ত আর কোনো ভারতীয় চলচ্চিত্র পরিচালক অর্জন করতে পারেনি লাইফটাইম অস্কার পুরস্কার।

সত্যজিৎ রায় জন্মগ্রহণ করেন ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের ২ রা মে ব্রিটিশ ভারতের কলকাতার রায় পরিবারে। বিখ্যাত বাঙালি সাহিত্যিক সুকুমার রায়ের একমাত্র সন্তান ছিলেন সত্যজিৎ রায়। তিনি কেবল সুকুমার রায়ের পুত্র হিসেবেই পরিচিত নন। তাঁর আরো অনেক পরিচয় রয়েছে। বিখ্যাত বাঙালি সাহিত্যিক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর প্রৌত্র ছিলেন সত্যজিৎ রায়। শুধু তাই নয় তিনি ছিলেন প্রখ্যাত বাঙালি মহিলা সাহিত্যিক লীলা মজুমদারের ভাইপো।


 সত্যজিৎ রায়ের শৈশবকাল পার হয়েছিল নিদারুণ দুঃখের মধ্য দিয়ে। তিনি মাত্র তিন বছর বয়সে হারান নিজের বাবাকে। সুকুমার রায় মারা যাবার ঠিক তিন বছর পর তাঁর ঠাকুরদার নিজে হাতে বানানো প্রিন্টিং কোম্পানি 'ইউ রায় অ্যান্ড সন্সে'র ব্যবসা হাতছাড়া হয়ে যায়। যার কারণে সত্যজিৎ রায় ও তাঁর মা সুপ্রভা দেবী গৃহহীন হয়ে পড়েন। অবশেষে সত্যজিৎ রায়কে নিয়ে তাঁর মা সুপ্রভা দেবী বাপের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেন। গৃহস্থের খরচ বহন করার জন্য সুপ্রভা দেবী সূচীকর্মের কাজ করতেন। 
   
সত্যজিৎ রায়ের শিক্ষাজীবন শুরু হয় বালীগঞ্জ সরকারি বিদ্যালয়ে। পড়াশুনোতে তিনি খুব একটা ভালো ছিলেন না। তিনি একজন মাঝারি মাপের ছাত্র ছিলেন। বিদ্যালয় জীবনেই চলচ্চিত্র ও চিত্রকলা নিয়ে তাঁর মধ্যে প্রবল আগ্রহের আবির্ভাব ঘটে। পড়াশুনা করার পাশাপাশি তাঁর সংবাদপত্রে  বিদেশি চলচ্চিত্রের বিভিন্ন খবর পড়ার একটা আলাদা নেশা ছিল। তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য প্রেসিডেন্সি কলেজে  বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। তবে পরবর্তীকালে তিনি অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা আরম্ভ করেন। প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়াশোনা শেষ করার পর তিনি একটি বেসরকারী কোম্পানিতে চাকরী পান। যদিও তিনি চাকরী করতে রাজী হননি। কেবল তিনিই নয় মা সুপ্রভা দেবীও ভেবে দেখেন যে তাঁর চাকরীর বয়স অত্যন্ত কম, অন্যদিকে তাঁর  চিত্রকলা নিয়ে প্রবল আগ্রহ রয়েছে। যা দেখে সুপ্রভা দেবী স্থির করেন সত্যজিৎ রায়কে বিশ্বভারতীতে ভর্তি করাবেন।

সেইমতো সুপ্রভা দেবী তাঁকে বিশ্বভারতীতে যাওয়ার কথা বলেন। তিনি বিশ্বভারতীতে যেতে প্রথমে রাজী ছিলেন না কারণ তিনি কলকাতা শহরকে এতো বেশি ভালোবাসতেন যে তাঁকে শহর ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করতো না। কিন্তু মায়ের অনুরোধ ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাকে অবজ্ঞা করে তিনি পারলেননা না করতে। এ বিশ্বভারতীতে নন্দলাল বসুর আনুগত্যে তিনি চিত্রকলা শেখেন। সত্যজিৎ রায়ের কর্মজীবন একজন বাণিজ্যিক চিত্রকর হিসেবে শুরু হলেও একদিন হঠাৎ কলকাতাতে বিখ্যাত ফরাসি চলচ্চিত্র নির্মাতা জঁ রনোয়ারের সাথে তাঁর সাক্ষাৎ ঘটে। পরবর্তীকালে বিলেতে সফররত অবস্থায় ইতালীয় নব্য চলচ্চিত্র 'লাদ্রি লাদ্রি দি বিচিক্লেত্তে' দেখে তিনি চলচ্চিত্র বানানোর জন্য আগ্রহী হয়ে ওঠেন।

তিনি ঠিক করেন প্রখ্যাত সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের লেখা ধ্রুপদী উপন্যাস 'পথের পাঁচালী' নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করবেন এরপর সেই মতো তিনি প্রায় তিনবছর ধরে কঠোর পরিশ্রম করে বানিয়ে ফেলেন মাস্টারপিস মুভি 'পথের পাঁচালী'। এ ছবির সাফল্যের পর তিনি বানিয়ে ফেললেন 'অপুর সংসার','মহানগর', 'চারুলতা', 'সোনার কেল্লা', 'হীরক রাজার দেশে'র মতো জনপ্রিয় সব বাংলা চলচ্চিত্র।

চলচ্চিত্র নির্মাণের দক্ষতার জন্য সারা বিশ্বজুড়ে নাম ছড়িয়ে পড়ে সত্যজিৎ রায়ের। চলচ্চিত্রের জন্য লন্ডনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রদান করেছিল সাম্মানিক ডক্টরেট। ফ্রান্স সরকার সত্যজিৎ রায়কে বিশ্ববিখ্যাত চলচ্চিত্রকার হিসেবে ফ্রান্সের সর্বোচ্চ সম্মান 'লিজিয়ন অব অনারে' ভূষিত করে। চলচ্চিত্র সম্মাননা হিসেবে তিনি অর্জন করেন পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ পুরস্কার ' লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অস্কার'। এছাড়াও তিনি জিতে নেন গোল্ডেন লায়ন, সিলভার বিয়ারের মতো অসংখ্য আন্তর্জাতিক পুরস্কার। ভারতে চলচ্চিত্র সম্মাননার জন্য তিনি অর্জন করেন 'দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার'। এবং তাঁর মৃত্যুর পর ভারত সরকার তাঁকে ভারতের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান 'ভারতরত্ন'  পুরস্কারে ভূষিত করে।


বিশ্ববিখ্যাত চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের অবদান আজীবন স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে পৃথিবীর ইতিহাসে। তিনি কেবল পরিচালকই ছিলেন না। তিনি ছিলেন একেধারে সাহিত্যিক, গ্রাফিক্স ডিজাইনার, চিত্রনাট্যকার, সংগীতকার ও চলচ্চিত্র প্রযোজক। তিনি বাংলা সাহিত্যকে দিয়েছেন অসংখ্য লেখনী। তিনি সৃষ্টি করেন 'ফেলুদা' 'প্রফেশর শঙ্কু'র মতো জনপ্রিয় গোয়েন্দা চরিত্র।

এমন এক মহান চিত্র পরিচালক আজকাল নেই বললেই চলে। তিনি যেভাবে প্রতিটি চলচ্চিত্রের নির্মাণশৈলী করে গেছেন তা এককথায় অনস্বীকার্য। আজ প্রতি বছর ২ রা মে সারা পৃথিবীজুড়ে পালিত হয় সত্যজিৎ রায়ের জন্মবার্ষিকী। আগামী ২রা মে নন্দন থ্রিতে 'সিনেমাটেক কলকাতা'  আয়োজন করতে চলেছে সত্যজিৎ রায়ের জন্মবার্ষিকী অনুষ্ঠান। যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকছেন বিখ্যাত চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষ, প্রখ্যাত অভিনেত্রী অলকানন্দা রায়, জনপ্রিয় চিত্র পরিচালক  মধুজা মুখার্জি ও বিখ্যাত চিত্র পরিচালক অশোক বিশ্বনাথনের মতো জনপ্রিয় সব ব্যক্তিত্বরা। অনুষ্ঠানে সঞ্চালনার দায়িত্বেে রয়েছেন বিখ্যাত সাংবাদিক ও চিত্র পরিচালক ঋতব্রত ভট্টাচার্য। এই অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত হবে সত্যজিৎ রায় পরিচালিত জনপ্রিয় বাংলা ছবি 'কাঞ্চনজঙ্ঘা'। এটি হলো বাংলার প্রথম রঙিন ছবি। এ ছবিতে অভিনয় করেন ছবি বিশ্বাস, করুণা বন্দোপাধ্যায়, পাহাড়ী সান্যাল, অনিল চট্টোপাধ্যায় ও অলকানন্দা রায়।

লিটারেসি প্যারাডাইসের তরফ থেকে সকলকে অনুরোধ রইল এ অনুষ্ঠানে যোগ দেবার জন্য। সকলে সপরিবারে এ অনুষ্ঠান দেখতে আসুন ও আনন্দ উপভোগ করুন।

প্রতিবেদন- সুমিত দে                                                                                                                                
             

No comments