Header Ads

কৌশিক রায় (পাউ) একক প্রচেষ্টায় সফল করলেন দুই বাংলার শিল্পীদের নিয়ে প্রথম হট্টমেলা চলচ্চিত্র উৎসব ২০১৯

বর্তমান প্রজন্মের বঙ্গসন্তানরা শুধুমাত্র বাঁধা ধরা কয়েকটি জীবন-যাপনের মধ্যেই আবদ্ধ থাকছেনা। তারা নতুন কিছু করার জন্য অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করছেন। শুধুমাত্র গান, বাজনা, সাহিত্যই নয় তাদের মধ্যে ব্যবসায়িক চিন্তাধারাও প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। ইন্টারনেট যখন দুনিয়ার যোগাযোগকে সুবিধা করে দিয়েছে তখন সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ বাঙালিও তার সদব্যবহার করতে শুরু করেছেন। সোশ্যাল মিডিয়া, নেটফ্লিক্সের সাথে সাথে মিডিয়া পার্টনার, স্টুডিও, শর্ট ফিল্মের এক দারুণ বাজার তৈরি হয়েছে। ৩০ কোটি বাঙালি রয়েছে সারা বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে, এত বড় বাজার ধরতে কলাকুশলীরা করে চলেছেন নতুন নতুন কাজ। হট্টমেলা চলচ্চিত্র উৎসব তারই একটি উদাহরণ। 


হট্টমেলার সাথে ইতিমধ্যেই জুড়ে গেছেন দুই দেশের প্রায় কুড়ি হাজার  মানুষ। একক প্রচেষ্টায় এরকম একটা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের জন্য অনেক লড়াই করতে হয়েছে কৌশিক রায় (পাউ) কে। প্রথম দিকে অনেকেই কটুক্তি করেছিলেন একা আর ও কী করবে’, কিন্তু তিনি হাল না ছেড়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করতে থাকেন। ধীরে ধীরে ওনার কয়েকজন বন্ধুও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। এভাবেই তিনি সফল করে তোলেন একটা ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল।

"হট্টমেলা",একটি সার্বিক সাংস্কৃতিক মাধ‍্যম, যার আত্মপ্রকাশ ,২০১৮ সালের ১০ই ফেব্রুয়ারি, ফেসবুক পেজের মাধ‍্যমে। সেখানে ভারত বাংলাদেশ মিলিয়ে বৃহত্তর বাংলার চলচ্চিত্র, গান, নাটক, লোকসংগীত, চিত্রকলা, চিকিৎসা, দুর্লভ চিত্র, দুর্লভ ভিডিও, বিখ্যাত উক্তি, মহৎ ব‍্যাক্তিদের সম্পর্কীয় অজানা তথ্য ছাড়াও অন‍্যান‍্য বিভিন্ন বিষয়, স্বল্প পরিচিত তথ‍্য ইত‍্যাদি নানান শিল্প সাংস্কৃতিক বিষয় নিয়ে চর্চা ও প্রকাশ করা হয়। এর প্রতিষ্ঠাতা এবং একমাত্র কার্য পরিচালক হলেন কৌশিক রায় (পাউ), তাঁর মতে সুস্থ রুচিশীল সাংস্কৃতিক চর্চা সবার মধ‍্যে প্রসারিত করা এবং নবীন প্রজন্মের কাছে বাংলা সংস্কৃতির অনেক অজানা তথ‍্য তুলে ধরে আমাদের নিজস্ব ভাষা ও ঐতিহ‍্যের প্রতি তাদের আন্তরিকতা বর্ধিত করার উদ্দেশ‍্যেই 'হট্টমেলা'-র এই নিরন্তর প্রয়াস।
গত ৩রা মার্চ, ২০১৯ কোলকাতার 'রবীন্দ্রচর্চা ভবন-এ আয়োজিত হয়েছিল, বর্ণাঢ‍্য প্রথম, 'হট্টমেলা চলচ্চিত্র উৎসব', যার শুভ উদ্বোধন করেন বাংলা চলচ্চিত্রের বিশিষ্ট চিত্রগ্রাহক তথা পরিচালক শ্রী প্রেমেন্দু বিকাশ চাকী মহাশয়।উদ্ধোধনী সংগীতের মাধ‍্যমে প্রথমে আত্মপ্রকাশ করে লোকগানের দল,'মন বাউল',পরিচালনায় শ্রী দীপেন ভট্টাচার্য।এই চলচ্চিত্র উৎসবে ভারত-বাংলাদেশ মিলিয়ে একদিনে মোট ৩৩টি স্বল্পদৈর্ঘ‍্যের চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয় তিনটি বিভাগে।

নতুন পরিচালকদের উৎসাহপ্রদানের জন‍্য, 'উত্থিত সম্ভাবনাময় বিভাগ', সেখানে মোট দশটি স্বল্পদৈর্ঘ‍্যের চলচ্চিত্র ও তথ‍্যচিত্র মিলিয়ে দেখানো হয়।সেখানে মোট দশটি ছোট ছবি প্রদর্শিত হয়, যথা:- 'জটিল অঙ্ক', 'ছুঁয়ে নেব আকাশ',  'আধুরী' , 'দৃড়পণ', 'দ্য স্টেস অফ লাইফ', 'আঁধার' , 'ফাইট অ্যান্ড ফান', তথ‍্যচিত্র 'বারাণসী,  একটি শান্তির আলয়', ' আমার ওন ফিল্মি রাইটিং" এবং "সুড়সুড়ি" ।
আন্তর্জাতিক বিভাগ'-এ প্রদর্শিত হয় বাংলাদেশের তিনটি ছবি।বাংলাদেশ সরকারের অনুদান প্রাপ্ত তথ‍্যচিত্র "বাতিঘর", 'ইভটিজার' এবং 'নেশা'বাংলাদেশ থেকে এসে অংশগ্রহণ করেছিলেন পরিচালক এস আই গগণ।

'পরিণত মননশীল' বিভাগে প্রদর্শিত হয় মোট ২০ টি স্বল্পদৈর্ঘ‍্যের চলচ্চিত্র। তার মধ‍্যে কোলকাতায় সর্বপ্রথম প্রদর্শিত হয় চারটি নতুন সৃজনশীল চলচ্চিত্র যার মধ‍্যে ছিল 'হট্টমেলা' প্রযোজিত, কৌশিক রায় (পাও) পরিচালিত দুটি চলচ্চিত্র যথা বাংলা থেকে নির্মিত সর্বপ্রথম শ‍্যাডোপাপেট্রি চলচ্চিত্র বা ছায়া পুত্তলিকা," ছায়াছবি" এবং রোমাঞ্চকর চলচ্চিত্র "গল্পের জুঁজু"।

কুমার চোধুরী পরিচালিত "একটি জলজ আখ‍্যান" এবং প্রিয়দর্শী ব‍্যানার্জীর "স্করপিয়ান"।
তাছাড়াও ছিল বহু প্রশংসিত তথ‍্যচিত্র,'শিল্প নির্দেশক সুনীতি মিত্র","তৃতীয় ছাদ","সাউন্ড অফ সাইল্যান্স","টিকিট" ও "কৃষ্ণকলি","ইরা","প্রতীক্ষা","রিকশা ওয়ালা","ডে আফটার ইন্ডিপেন্ডেন্স ডে","এ নাইট হরর রিটার্নস","বাগনানের রূপালী কথা","নীড় খোঁজে মন","আকাঙ্ক্ষা","ফোনিক্স","ছুটি" এবং "সত‍্য রে লও সহজে "।

এতোগুলি চলচ্চিত্র একদিনে প্রদর্শনের কজটি ছিল অত‍্যন্ত কঠিন।নিজের কঠোর পরিশ্রমে সমগ্র চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজনটি করেন 'হট্টমেলা'-র কর্ণধার কৌশিক রায় (পাও) একা। সমগ্র অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন  মীরাক্কেল খ‍্যাত শুভব্রত নন্দী। সমগ্র অনুষ্ঠানটির ব‍্যবস্থাপনা করেন ভিক্টর দেবনাথ ও তাঁর ইভেন্ট ম‍্যানেজমেন্ট কোম্পানি "ভিয়েরা"। শব্দ ও আলোক ব‍্যবস্থাপনা করেন শ্রী প্রদ‍্যুৎ কুমার মাইতি । পুষ্পসজ্জায় ছিলেন অর্ঘ্য বিশ্বাস। আয়োজন সহায়ক ছিলেন কাশীনাথ ঘোষ।তাঁর সহিত শ্রী অশোক কুমার কর্মকার-এর পরিচালনায় "মেলোডিকা"-র সদস‍্যরা পরিবেশন করেন বাঁশিতে মনোগ্রাহী সমবেত সংগীত।
মোট নয় জন বিশিষ্ট অতিথিকে সম্মাননা জানানো হয় "হট্টমেলা অনন‍্য সম্মান ২০১৯"প্রদানের মাধ‍্যমে। তাদের মধ‍্যে ছিলেন শ্রী সমীর কুন্ডু (বিশিষ্ট শিল্প নির্দেশক), শ্রী বাবু রায় (বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালক), শ্রী প্রেমেন্দু বিকাশ চাকী (বিশিষ্ট চিত্রগ্রাহক তথা পরিচালক), শ্রী অশোক কুমার কর্মকার (বিশিষ্ট বংশীবাদক), শ্রী দীপেন ভট্টাচার্য্য (বিশিষ্ট লোকসংগীত শিল্পী ), শ্রী বিজয় শেঠ (বিশিষ্ট চিত্র সাংবাদিক), শ্রী সোম চক্রবর্তী (বিশিষ্ট স্বাধীন চলচ্চিত্র পরিচালক), শ্রী মেঘ ব‍্যানার্জী (প্রতিভাবান সংগীত পরিচালক) এবং শুভব্রত নন্দী (প্রতিভাবান উপস্থাপক তথা কৌতুক শিল্পী)।

এই উৎসবে কোন প্রতিযোগিতা ছিল না। তাই বিশিষ্ট অতিথিদের হাত দিয়ে প্রদর্শিত প্রতিটি স্বল্পদৈর্ঘ‍্যের চলচ্চিত্রকে উৎসাহিত করে প্রদান করা হয় 'হট্টমেলা চলচ্চিত্র সম্মান ২০১৯' এবং তার সহিত সংশাপত্র। স্মারক নিবেদন সহায়ক ছিলেন "শিল্পনীড় রেকর্ডস"।


এছাড়াও উৎসবে অংশগ্রহণকারী প্রতিটি সংগীত শিল্পীকে তথা অনুষ্ঠানের আয়োজন সহায়কদের সংশাপত্র প্রদান করা হয় সমাপ্তিতে।পরবর্তীতে 'হট্টমেলা' থেকে আরো নানান প্রকার সাংস্কৃতিক উৎসব আয়োজনের সুপরিকল্পনা রয়েছে এমনটাই জানান কৌশিক রায় (পাও)। এই ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে অংশগ্রহণকারী শ্রীমা ফিল্মস প্রোডাকশনের পরিচালক অভিরণ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়- কৌশিক রায়(পাও)এর একা চেষ্টায় উনি যা করেছেন তা প্রশংসার দাবী রাখে। অসাধারণ, আমি অত্যন্ত খুশি। দুই দেশের কলাকুশলীদের সাথে পরিচয় ও যোগাযোগের জন্য আমাদের কাছে এটি একটি অন্যতম প্ল্যাটফর্ম ও সুযোগ। তাছাড়া সিনেমার সাথে যুক্ত সবার কাছে নিজের সিনেমার স্ক্রিনিং এর ব্যাপারটাও আনন্দের আশা করি আগামী দিনে এই উৎসবের আকার ও প্রসার দুইই বাড়বে  

প্রতিবেদন-অমিত দে


No comments