দেশনায়ক নেতাজীর আজাদ হিন্দ বাহিনীর পথে অভিযানে একালের শঙ্কর অনিন্দ্য মুখার্জী
বর্তমানে বাঙালি
অভিযাত্রী বললেই যার নাম আগে মনে আসে তিনি আমাদের সকলের প্রিয় অভিযাত্রী অনিন্দ্য
মুখার্জী। তিনি হলেন প্রথম ভারতীয় যিনি সাইকেলে সাহারা মরুভূমি অভিযান করেছেন।
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের চাঁদের পাহাড় যাত্রা পথেও তিনি অভিযান করেছেন। তিনি
চীনের ইউনান প্রদেশে একটি নতুন পর্বতমালা আবিষ্কার করেন, তিনি নন্দাদেবী
স্যাংচুয়ারির এক নতুন গিরিপথও তিনি আবিষ্কার করেন। সেই একই আবিষ্কারের তাগিদ নিয়েই
তিনি শুরু করেছেন দেশনায়ক নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু যে পথে আজাদ হিন্দ বাহিনীকে
নিয়ে গিয়েছিলেন স্বাধীনতার যুদ্ধে সেই পথের জনশ্রুতি ও পুরানো স্মৃতিকে খুঁজে বের
করতে ও দেশনায়ককে নিয়ে নতুন কিছু আবিষ্কারের সন্ধান। এক বাঙালি যোদ্ধা যিনি আজও সব
ভারতবাসীর মনে প্রাণে বিরাজমান সেই নেতাজীকে নিয়েই আর এক সাহসী বাঙালির এমন
পদক্ষেপকে কুর্নিশ করতেই হয়। আমাদের অনিন্দ্য মুখার্জী, হ্যাঁ ওনাকেও তো
সাহসী বলতেই হয় যিনি প্রথম ভারতীয় হিসেবে সাইকেলে বিষুব রেখা থেকে মকরক্রান্তি
রেখা অতিক্রম করেছেন, যিনি প্রথম
ভারতীয় হিসেবে গ্রীনল্যান্ডের কোনো পর্বত জয় করেছেন, যিনি প্রথম দক্ষিণ এশিয় হিসেবে এলব্রুজ
পাহাড়ের হাই অল্টিটিউড রেসে সফল, যিনি প্রথম বাঙালি হিসেবে মাউন্ট কিলিমানজারো জয় করেছেন। এরকম সাহসী মানুষের এরকম মানুষকে নিয়ে অভিযান ও
গবেষণার জন্য বাঙালি হিসেবে আমরা গর্ব বোধ করতেই পারি।
নেতাজীর এই যুদ্ধপথে
অভিযানের জন্য তিনি প্রায় দুই বছর পড়াশোনা করে নেমে পড়েছেন নেতাজীর ইতিহাস
রোমন্থনে। অভিযাত্রী অনিন্দ্য মুখার্জীর এই অরাজনৈতিক নিস্বার্থ গবেষণা আমাদের
বরাবরই উৎকৃষ্ট করে এসেছে। অনিন্দ্য মুখার্জীর লেখা ‘অতএব আফ্রিকা’, ‘গঙ্গা থেকে চীনশা’, ‘সাহারায় সীতাহরণ’ লেখাগুলি পড়লে
যে কেউ সমৃদ্ধ হবেন এ বিষয়ে সন্দেহ নেই।
সিঙ্গাপুর থেকে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, বার্মা তথা মায়ানমার হয়ে মনিপুর, নাগাল্যান্ডের বিস্তৃত পথ এখনও আমাদের প্রিয় নেতাজীকি কিভাবে মনে রেখেছে এসব অনেক তথ্যই আমরা পেতে পারবো ওনার এ ভ্রমণের ফলে। পুরানো ইবন বতুতা, টলেমী বা বিভিন্ন অভিযাত্রীদের এই লেখাগুলো কালের দলিল হয়ে আজও বেঁচে আছে তাই এইরকম কাজে এ অভিযান আরো অনেক মানুষকে হয়তো অনুপ্রাণিত করবে। অনিন্দ্যবাবুর মতে- এরকম অভিযান অল্প পড়াশুনা করে করা উচিত নয় যদি না কেউ নেতাজী স্কলার না হন তবে আমি আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি।
এ অভিযানের সাথে সাথেই তিনি লিখেছেন ‘দেশনায়কের পথে’ যা পড়লে ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে চার্চিলের নেতৃত্বকালে যখন প্রায় ৬০ লাখ বাঙালি দুর্ভিক্ষে মারা গেলেন তখন নেতাজী রেঙ্গুন থেকে জাহাজে খাবার পাঠাতে চেয়েছিলেন কিন্তু ইংরেজ তা আসতে দেয়নি এরকম হাড়হিম করা তথ্য জানা যায়।
১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের ২৪ শে
অক্টোবর সিঙ্গাপুরের পাদাং এ পঞ্চাশ হাজার আজাদ হিন্দ বাহিনীর সেনার সমাবেশে
নেতাজী জাপানের প্রধানমন্ত্রী তোজো এবং বার্মার প্রধানমন্ত্রী বা ম এর উপস্থিতিতে
ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন, সেখানে বর্তমানে একটি আই এন এ মেমোরিয়াল গড়ে উঠেছে সেখান
থেকেই অভিযাত্রী অনিন্দ্য মুখার্জী অভিযান শুরু করেছেন। এই সমাবেশেই তোজো আজাদ
হিন্দ বাহিনীকে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ তুলে দেওয়ার কথা জানান।
নেতাজী যে যে স্থানে
গিয়েছিলেন সেই সেই স্থানে ও যেসব জায়গায় নেতাজীর যুদ্ধ সংক্রান্ত সৌধ তৈরি হয়েছে
সেই সেই স্থানে গিয়ে গিয়ে নতুন তথ্য আবিষ্কারের চেষ্টা করে চলেছেন তিনি।
আজাদ হিন্দ ফৌজের এ পথে
যাওয়ার জন্য অভিযাত্রী অনিন্দ্য মুখার্জীকে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন তথ্যচিত্র নির্মাতা
সৌমিত্র দস্তিদার এবং অনিন্দ্যবাবুর বন্ধু সুমন। এই অভিযানে উত্তরবঙ্গ সংবাদ বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করেছে। উত্তরবঙ্গ সংবাদের পাতায় 'দেশনায়কের পথে' ধারাবাহিকভাবে প্রকাশও পাচ্ছে।
সিঙ্গাপুর থেকে রেঙ্গুনে আজাদ হিন্দ ফৌজ ট্রেনে, ট্রাকে বা কখনও পায়ে হেঁটে গিয়েছিলেন অনেকটা সেই ভাবেই যাচ্ছেন অনিন্দ্য মুখার্জী। তবে এ ভ্রমণটির ক্ষেত্রে সাইকেল বা বাইকে সাহারার মতো শুধু অভিযান-ই উদ্দেশ্য নয় বরং তিনি নেতাজী সংক্রান্ত গবেষণাটাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। তিনি যাত্রাপথ ঠিক করতে সাহায্য নিচ্ছেন ইন্টারনেট থেকে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, মায়ানমারের মানচিত্র ও আজাদ হিন্দ বাহিনীর সেনাপতিদের লেখা বইগুলোতে হাতে আঁকা মানচিত্রগুলির।
সিঙ্গাপুর থেকে রেঙ্গুনে আজাদ হিন্দ ফৌজ ট্রেনে, ট্রাকে বা কখনও পায়ে হেঁটে গিয়েছিলেন অনেকটা সেই ভাবেই যাচ্ছেন অনিন্দ্য মুখার্জী। তবে এ ভ্রমণটির ক্ষেত্রে সাইকেল বা বাইকে সাহারার মতো শুধু অভিযান-ই উদ্দেশ্য নয় বরং তিনি নেতাজী সংক্রান্ত গবেষণাটাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। তিনি যাত্রাপথ ঠিক করতে সাহায্য নিচ্ছেন ইন্টারনেট থেকে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, মায়ানমারের মানচিত্র ও আজাদ হিন্দ বাহিনীর সেনাপতিদের লেখা বইগুলোতে হাতে আঁকা মানচিত্রগুলির।
নেতাজীকে নিয়ে যেমন অনেক
সৌধ, মেমোরিয়াল গড়ে
উঠেছে এরকম সুখকর খবর যেমন পাচ্ছি অনিন্দ্যবাবুর হাত ধরে তেমন সিঙ্গাপুরের
ওয়াটারলু স্ট্রিটে ঝাঁসি ব্রিগেডের ব্যারাকের কোন অস্তিত্ব নেই এরকম হৃদয় বিদারক
খবরও আমরা জানতে পারছি।
অভিযান এখনও শেষ হয়নি তবে মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশের মধ্য দিয়ে যাওয়ার কী অনুমতি পাবেন? এরকম অনেক প্রশ্ন অপেক্ষা করছে আমাদের সবার জন্য। মায়ানমারের মান্দালয়, মুলমিন, মেমিও, মেইকটিলা এসব জায়গা তিনি যেতে পারবেন তবে রাখাইন হয়ে ভারতের সীমান্ত প্রবেশ নিয়ে তিনি চিন্তিত। আমাদের সকলের আসা তিনি অনুমতি পাবেন এবং নেতাজী সংক্রান্ত নতুন নতুন তথ্য তিনি খুঁজে পাবেন। ওনার এই অভিযান নিয়ে উন্মাদনা এখন তুঙ্গে। ওনার এই অভিযান নিয়ে লেখা বিভিন্ন প্রবন্ধ ও ওনার বই এবং অবশ্যই ওনার পরবর্তী অভিযানের জন্য আমরা রইলাম অপেক্ষায়। ওনার এই অভিযান সফল হোক।
প্রতিবেদন- অমিত দে, ছবি-অনিন্দ্য মুখার্জী
Post a Comment