আসামে বাঙালিকে রাষ্ট্রহীন করার চক্রান্তের প্রতিবাদে দিল্লিতে একঝাঁক বাঙালি বুদ্ধিজীবিদের আলোচনাসভা
দিল্লি:দেশজুড়ে শুরু হয়েছে বাঙালিদের রাষ্ট্রহীন করার চক্রান্ত। আসামে এনআরসির মাধ্যমে
বাঙালিরা হারাতে বসেছে নাগরিকত্ব। বর্তমানে আসামের বাঙালিরা অসহায়। শুধু বর্তমান বললেও ভুল
হবে পূর্বেও কিন্তু আসামে বাঙালিরা অসহায় ছিল। ১৯৬১ খ্রীস্টাব্দের ১৯ শে
মে আসামের বরাক উপত্যকায় বাঙালিদের ওপর জোর করে অসমিয়া ভাষা চাপিয়ে
দেওয়ার চেষ্টা করে। যার প্রতিবাদে শিলচরে আসাম পুলিশের গুলির আঘাতে শহীদ হন ১১ জন বাঙালি। তারপর ১৯৮৩ খ্রীস্টাব্দের ১৮ ই
ফেব্রুয়ারী অসমীয়া জাতীয়তাবাদী শক্তির সমর্থক কয়েক হাজার দুষ্কৃতিকারীরা নৃশংসভাবে
প্রায় ছয় হাজারেরও বেশি বাঙালি মানুষকে হত্যা করেছিল। যে ঘটনাগুলোর পিছনে থাকা
দোষীদের কোনো বিচার হয়নি।
২০১৫ এর মে মাসে শুরু হয় এনআরসির আবেদন
প্রক্রিয়া। যার ফলাফল প্রকাশিত হয় ২০১৮ এর ৩০ শে জুলাই। এনআরসির ভিত্তিতে নাম
মুছে ফেলা হয় প্রায় ৪০ লক্ষ বাঙালির নাম। কী হবে এই ৪০ লক্ষ
বাঙালির?
কোথায় যাবে এরা? কেন্দ্রীয়
সরকার নিরুত্তর থাকে। তাদের কোনো বলার ভাষা নেই। কারণ এনআরসির কান্ডারী তো বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার। দেশের সরকার যখন একটা
জাতিকে দেশছাড়া করার সিদ্ধান্ত নেয় সেখানে বাঙালি কার ওপর ভরসা করবে? স্বাভাবিকভাবেই
ভারতের সুপ্রিমকোর্টের ওপর ভরসা করতে হবে বাঙালিকে। বাঙালি ভরসা রেখেছে সুপ্রিমকোর্টের ওপর। কিন্তু তা সত্বেও বাঙালির শান্তির কোনো কিনারা হয়নি বরং বেড়ে চলেছে এন আর সির নিয়মকানুন।তাই বাঙালির অধিকার বাঙালিদের
নিজেদের হরণ করতে হবে। লড়াই করতে হবে ।
বাঙালি আজ বিপন্ন। একাধিক বাঙালি চিন্তিত নিজের জাতির
জন্য। অথচ বাঙালিদের মধ্যে আজও থেকে গেছে অসংখ্য মিরাজাফর। যারা এনআরসিকে সমর্থন
করছে। যারা নিজ জাতিসত্ত্বাকে বিক্রি করার জন্য প্রস্তুত। যারা বাঙালি হয়েও বাঙালির
অপমান করে অন্য জাতির কাছে। যারা রাজনীতির স্বার্থে ভাঙতে চায় নিজ জাতিকে। যাদের মাথায় নিজ জাতি
নিয়ে কোনো চিন্তা নেই। কেউ জানেনা বাঙালি জাতির ভবিষ্যৎ কী?
২০১৮ সালের ১ লা নভেম্বর আসামে গুলি করে হত্যা করা হয় পাঁচ বাঙালিকে। নাগরিকত্ব হারানোর জ্বালায়
আত্মহত্যা করতে হয়েছে ত্রিশেরও অধিক বাঙালিদের। অসংখ্য বাঙালিদের ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে তাদের
ঘরছাড়া করে রাখা হয়েছে ডিটেনশন ক্যাম্পে। আসামের সকল বাঙালির চোখে
আজ ভেসে উঠছে বিপদের কালো মেঘ।
ডিটেনশন ক্যাম্প, ডি-ভোটার, ত্রুটিপূর্ণ এনআরসির বিরুদ্ধে আগামী ২৯ শে ডিসেম্বর সকাল ১০ টায় সারা
বাঙালী যুব ছাত্র সংস্থার উদ্যোগে দিল্লির ডেপুটি চেয়ারম্যান হল ও কনস্টিটিউশন
ক্লাব অফ ইন্ডিয়াতে আয়োজিত হবে একটি জাতীয় আলোচনাসভা। এই সভাতে উপস্থিত থাকবেন
নতুন দিল্লির সেন্ট্রাল ফর ইকুইটি স্টাডিজ হিউম্যান রাইট অ্যাক্টিভিস্টের আধিকারিক
শ্রী হর্ষ মান্দের, আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ড. তপোধীর ভট্টাচার্য, ত্রিপুরার প্রাক্তন সাংসদ
ও আইনজীবি সুবল ভৌমিক, বিহার বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ড. দিলীপ সিনহা, দিল্লির বেঙ্গল
অ্যাসোসিয়েশনের জেনারেল সেক্রেটারি শ্রী তপন সেনগুপ্ত, আসামের করিমগঞ্জ এলাকার
সাংসদ শ্রী কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ, অল আসাম বেঙ্গলি ইউথ এন্ড স্টুডেন্টস ফেডারেশনের চিফ অ্যাডভাইজার শ্রী
চিত্ত পাল, অল আসাম বেঙ্গলি ইউথ এন্ড স্টুডেন্টস ফেডারেশনের সভাপতি শ্রী দীপক দে, অল বি.টি.সি বেঙ্গলি ইউথ এন্ড স্টুডেন্টস
ফেডারেশনের চিফ অ্যাডভাইসার শ্রী শ্যামল সরকার, অল বেঙ্গলি ইউথ এন্ড স্টুডেন্টস অরগানাইজেশন পশ্চিমবঙ্গের কনভেনর
শ্রী শৌভিক বাগচি, অল আসাম বেঙ্গলি ইউথ এন্ড স্টুডেন্টস ফেডারেশনের সহ সভাপতি শ্রী রথীন্দ্র
দাস, ইন্ডিয়ান রেভিনিউ সার্ভিস গৌহাটির পুনর্নিদেশক শ্রী
শুভ্রাংশু দেব, অল বেঙ্গলি ইউথ এন্ড স্টুডেন্টস
অরগানাইজেশন নিউ দিল্লির সভাপতি চন্দন চ্যাটার্জি, অল বেঙ্গলি ইউথ এন্ড স্টুডেন্টস অরগানাইজেশন উত্তরাখণ্ডের
সভাপতি উত্তম বিশ্বাস। এই আলোচনাসভার বিশেষ আকর্ষণ হলো মার্টিয়ারস অফ নাইটিন্থ মে নামক একটি
ডকুমেন্টারি প্রদর্শন।
প্রতিবেদন- সুমিত দে, সংগ্রাহক- অমিত দে
প্রতিবেদন- সুমিত দে, সংগ্রাহক- অমিত দে
Post a Comment