গানে-গল্পে সমাপ্তি ঘটলো বাংলা পক্ষ আয়োজিত আইয়ুব বাচ্চু স্মরণে রুফটপ কনসার্ট
কলকাতা: 'এই রূপালি গিটার ফেলে একদিন যাবো আমি চলে।' 'সেই তুমি কেন এতো অচেনা
হলে।'
'অনন্ত প্রেম তুমি দাও আমাকে।' 'চলো বদলে যাই।' 'শেষ চিঠি কেমন এমন চিঠি।' 'ঘুম ভাঙ্গা শহরে।' আরো অনেক অনেক জনপ্রিয়
গান। যে গানগুলোর যাদুকর আইয়ুব বাচ্চু। গত ১৮ ই অক্টোবর রূপালি
গিটার ফেলে না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন বাঙালির প্রাণের সংগীত শিল্পী আইয়ুব বাচ্চু। তিনি জন্মগ্রহণ করেন
বাংলাদেশের চট্টগ্রামে। তিনি কলেজজীবনে পড়ার সময় তাঁর সহপাঠীদের নিয়ে 'গোল্ডেন বয়েজ' নামে একটি বাংলা ব্যান্ড
বানান। পরবর্তীকালে এই ব্যান্ডের নামকরণ হয় 'আগলি ব্যান্ড।' তিনি বাংলা গান নিয়ে অনেক বড়ো স্বপ্ন দেখতেন। তাঁর গানে দেশপ্রেম, ভাষাপ্রেম,
জীবনের দুঃখ-যন্ত্রণার নিদারুণ প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠতো। তাঁকে বাংলাদেশের ব্যান্ড
মিউজিক জগতের অন্যতম পথিকৃত বলা হয়। বাংলা সংগীতকে বিশ্বসভায়
প্রতিস্থাপন করা ছিল আয়ুব বাচ্চুর উদ্দেশ্য। তিনি যতদিন বেঁচেছেন গানে
গানে মুগ্ধ করেছেন দুই বাংলার আপামর বাঙালি সমাজকে। তিনি তাঁর সাধ্যমতো
সৃষ্টি করেছেন অসংখ্য গান। যা বাংলা গানের ইতিহাসে যুগের পর যুগ মাইলস্টোন হয়েই থেকে যাবে।
গত ১৮ ই অক্টোবর হৃদরোগে আক্রান্ত
হয়ে মাত্র ৫৬ বছর বয়সে পরলোক গমন করলেন জনপ্রিয় বাঙালি সংগীত শিল্পী আইয়ুব বাচ্চু। তাঁর অকাল মৃত্যু মেনে
নিতে পারেনি দুই বাংলার বাঙালিরা। ভারতের স্বাধীনতার পর পৃথক করা হয় বাঙালিদের। দুই বাংলাকে ভেঙ্গে দেওয়া
হয়। দুই বাংলার মধ্যিখানে বাঁধা হয় কাঁটাতার। বাংলাদেশকে পরিণত করা হয়
পৃথক রাষ্ট্রে। কিন্তু তারপরও ভাতৃত্ববোধ ছিন্ন হয়নি দুই বাংলার। আজও দুই বাংলার মানুষের
মাঝে থেকে গেছে দুই বাংলার সংস্কৃতি। এক বাংলা সর্বদা অপর
বাংলার শিল্পীদের শ্রদ্ধা করে।
গতকাল অর্থাৎ ২৫ শে নভেম্বর বাংলা শিল্পী পক্ষের তরফ থেকে আয়োজন করা হয়
আইয়ুব বাচ্চুর স্মরণে একটি রুফটপ কনসার্টের । দুই বাংলার সংস্কৃতি-সংগীতের
ঐতিহ্যকে অটুট রাখতে ও দুই বাংলার মধ্যে মেলবন্ধন ঘটাতে আয়োজন করা হয় এই স্মরণসভার। হাওড়ার শিবপুর
মন্দিরতলাতে টাইনি টটস স্কুলের নিকট অনুষ্ঠিত হয় আইয়ুব বাচ্চুর স্মরণে রুফটপ
কনসার্ট। এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছিলেন সুব্রত আচার্য, অভ্রদীপ্ত ব্যানার্জী, সঞ্জয়
রায়, আয়ুব বাচ্চুর ছাত্র বাপ্টু এবং আরো অনেকে। সুব্রত আচার্যের কণ্ঠে
এখন অনেক রাত, অভ্রদীপ ব্যানার্জীর কণ্ঠে হাসতে দেখো গাইতে দেখো, সঞ্জয় রায়ের কণ্ঠে উড়াল
দেব আকাশে ধ্বনিত হয়। এছাড়াও অন্যান্য শিল্পীদের কণ্ঠে আরো অসংখ্য গান ধ্বনিত হয়। অনুষ্ঠানে একসাথে অনেক
শিল্পী ও দর্শকদের কোরাসে গাইতে দেখা গেছে আইয়ুব বাচ্চুর সবথেকে জনপ্রিয় গান 'সেই তুমি কেন এতো অচেনা
হলে।' আইয়ুব বাচ্চুর ছাত্র বাপ্টু আইয়ুব বাচ্চুর সাথে নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। সবমিলিয়ে একটা জমজমাট গানের আসরের সমাপ্তি ঘটল ২৫ শে নভেম্বর রাতে।
আইয়ুব বাচ্চু বর্তমানে সশরীরে নেই। কিন্তু তাঁর গান হৃদয়ে থেকে যাবে আপামর বাঙালির। রয়ে যাবে তাঁর পুরানো স্মৃতি ও রূপালি গিটারগুলো। বাংলা পক্ষের আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে উপচে পড়েছিল
মানুষের ভিড়। দর্শকদের উত্তেজনার
পারদ ছিল তুঙ্গে। বাংলা পক্ষ আয়োজিত এ
রূপটপ কনসার্টের জন্য বাংলা পক্ষকে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠান মীর ও জয় সরকার।
প্রতিবেদন- সুমিত দে
প্রতিবেদন- সুমিত দে
Post a Comment